দীর্ঘ আক্রমণ-অবরোধের পর এবার গাজা সিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মানবিক সহায়তার জন্য চালু থাকা সাময়িক যুদ্ধবিরতিও আর কার্যকর থাকবে না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “আমরা অপেক্ষা করছি না। গাজা সিটিতে অভিযানের প্রাথমিক ধাপ শুরু করেছি।” তিনি আরও জানান, সেনারা শহরের উপকণ্ঠে “তীব্র শক্তি” নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে।
যুদ্ধের পাশাপাশি গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, শহরের পুষ্টি কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত শিশুর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র টেস ইংগ্রাম জানান— “ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, দুর্ভিক্ষ গাজা সিটিকে ধ্বংস করছে। অভিভাবকেরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন, কারণ তাদের আর কোনো বিকল্প নেই।”
স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ শক্তিবর্ধক খাবার সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অতি সীমিত।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন অন্তত ৫ জন, যাদের মধ্যে ২ শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩২২ জনে দাঁড়িয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে ১২১ জন শিশু।
৬ আগস্ট থেকে গাজা সিটিতে ধারাবাহিক বিমান ও স্থল হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। এতে জেইতুন ও সাবরা এলাকায় অন্তত এক হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ হামলার কারণে হাজারো বাসিন্দা পশ্চিমাঞ্চলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। শুধু শুক্রবারেই গাজাজুড়ে ৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন খাদ্য সহায়তা প্রার্থী। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, নেজারিম করিডোরে খাদ্যের খোঁজে আসা তিনজনকে ইসরায়েলি সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে।
শুক্রবার ভোরে খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকা, যা ইসরায়েলের তথাকথিত “নিরাপদ অঞ্চল” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হন। নিহতরা তাঁবুতে ঘুমিয়ে ছিলেন।
এক আহতের স্বজন বলেন— “আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, তখনই বোমা পড়ে। অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই আমরা নিজেরাই আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেছি। দয়া করে যুদ্ধ থামান, শিশুদের প্রতি দয়া করুন।”
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসেবে, প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা অন্তত ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা ও অবরোধ মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে। খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।
গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, গাজা সিটির ওপর পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু হলে এটি মানবিক বিপর্যয়ের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
Leave a comment