গাজা উপত্যকার অধিকাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। রোববার গাজার জনসংযোগ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপত্যকার প্রায় ৭৭ শতাংশ এলাকা বর্তমানে দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে বাকি স্বল্প পরিসর এলাকাতেই এখন আবদ্ধ হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি, যারা চরম খাদ্যসংকট, নিরাপত্তাহীনতা ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পুরো গাজা নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার ঘোষণা অনুযায়ীই চলছে সামরিক অভিযান। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানও অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সাম্প্রতিক অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা গাজার অভ্যন্তরে বেসামরিক এলাকাগুলোতেও প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্থানীয় প্রশাসন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে, আর না গেলে চালানো হচ্ছে গুলি। ফলে বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। গাজার জনসংযোগ কার্যালয় বলেছে, এই পরিস্থিতি জাতিগত নিধন, উপনিবেশবাদ ও দখলদারির বহিঃপ্রকাশ। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ইসরায়েল এই নীতি অনুসরণ করছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তারা দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় প্রায় প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিরা নিহত হচ্ছেন। শুধু গতকাল শনিবারই গাজার খান ইউনিস, জাবালিয়া ও নুসেইরাতে চালানো হামলায় অন্তত ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আশরাফ আবু নার মানের এক স্থানীয় সাংবাদিকও রয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। এই দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতা ও দখলদারি পরিস্থিতিকে গাজাবাসী বলছে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট।
যদিও ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নির্মূল করতেই তারা অভিযান চালাচ্ছে, তবে বাস্তবে গোটা উপত্যকাই পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে, আর সাধারণ মানুষই এর প্রধান শিকার। আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিন্দা সত্ত্বেও ইসরায়েলি অভিযান থামার কোনো লক্ষণ নেই।
Leave a comment