গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ‘যুদ্ধবিরতির’ আলোচনার আড়ালে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের নীতি বাস্তবায়নে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বৈঠকের পর এই উদ্বেগ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
ওয়াশিংটন সফরের সময় নেতানিয়াহু ‘গাজায় কাজ এখনো শেষ হয়নি’ বলে ঘোষণা দেন, আর ট্রাম্প দাবি করেন ‘যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তির পথ প্রশস্ত করতে চান।’ অথচ গাজায় এখনো ইসরায়েলি সেনা অভিযান চলছে, নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৫০০।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির দাবি থাকলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর চাপ প্রয়োগ করছে না যুক্তরাষ্ট্র। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান ফিনুকেন বলেন, “যদি যুদ্ধবিরতিই হয় প্রধান অগ্রাধিকার, তবে মার্কিন সামরিক সহায়তা ব্যবহার করে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করাও উচিত।”
নেতানিয়াহুর সঙ্গে একমত হয়ে ট্রাম্প গাজাকে শান্তির বার্তা দেওয়ার কথা বললেও একদিকে তিনি ভারী বোমার চালান আবারও চালু করেছেন, যা বাইডেন প্রশাসন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল।
এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতির নামে ‘আংশিক দখল’ বা ‘জবরদস্তিমূলক স্থানান্তর’ই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রকৃত লক্ষ্য কি না—সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মানবাধিকারকর্মীরা। কুইন্সি ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যানেল শেলিন বলেন, “যুদ্ধবিরতির আড়ালে জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস ইতিমধ্যে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির দাবি জানিয়েছে ও বন্দিমুক্তির ইঙ্গিতও দিয়েছে। কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে নেতানিয়াহু বরাবরই অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এরই মধ্যে দক্ষিণ গাজায় ‘বন্দিশিবির’ তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। এ পরিকল্পনাকে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিগত নির্মূল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এ পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বক্তব্য—‘গাজা এখন মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়’—নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখপাত্র বলেছেন, “এই অঞ্চলকে আবার নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করতে চান তিনি।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করছে, বোমাবর্ষণ ও খাদ্য সংকটের মুখে মানুষকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করাই হচ্ছে বাস্তবতা। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির সভাপতি ন্যান্সি ওকাইল বলেন, “যুদ্ধবিরতির নামে যদি উচ্ছেদই মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে এটাকে প্রকৃত যুদ্ধবিরতি বলা যাবে না।”
গাজার বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। হাসপাতালগুলোতে নেই জ্বালানি, রোগীরা মৃত্যুর মুখে, খাদ্য নিতে গিয়ে নিহত হচ্ছেন বহু মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর একমতের ঘোষণা, আর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন—এই দুই নেতার যৌথ কৌশলের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র: আল জাজিরা
Leave a comment