ইসরায়েলের অবরোধে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে গাজা উপত্যকা। স্থানীয় সিভিল ডিফেন্সের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন সেখানে অন্তত এক হাজার ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে প্রতিদিন গড়ে একশটির বেশি ট্রাক প্রবেশ করছে না, যা মোট চাহিদার মাত্র দশ শতাংশ। ফলে উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য ন্যূনতম খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীও নিশ্চিত হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আল জাজিরাকে জানান, যে স্বল্পসংখ্যক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে, তার বেশির ভাগই সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের হাতে সেই ত্রাণ পৌঁছায় না। তিনি আরও বলেন, ২২ মাস ধরে চলমান সংঘাতের মধ্যে গত ২ মার্চ থেকে নতুন অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। টানা ১১ সপ্তাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখার পর মে মাসের শেষ দিকে সীমিত পরিসরে কিছু ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এখনো উপত্যকার খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট মারাত্মক আকারে রয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আল-বুরশ এক বিবৃতিতে বলেন, নারী ও শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে ইসরায়েল। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় এক বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। পাশাপাশি পাঁচ বছরের নিচে আড়াই লাখ শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে এবং ১৮ বছরের নিচে প্রায় ১২ লাখ শিশু চরম খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংঘাত শুরুর পর থেকে অনাহারে অন্তত ২৫১ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েও অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২৭ মে থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া ১ হাজার ৭৬০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। চলমান সংঘাত শুরু হওয়ার পর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬১ হাজার ৮২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৫৫ হাজার ২৭৫ জন আহত হয়েছেন।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহকারী শতাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল দাবি করছে উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশে কোনো বাধা নেই। অথচ বাস্তবে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক এনজিও ২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত জীবনরক্ষাকারী কোনো ত্রাণসামগ্রী উপত্যকায় প্রবেশ করাতে পারেনি। ফ্রান্সভিত্তিক দাতব্য চিকিৎসা সংস্থা এমএসএফ–এর কর্মকর্তা নাতাশা দাভিয়েস বলেন, “সীমান্তে অসংখ্য ট্রাক ত্রাণসামগ্রী আটকা পড়ে আছে, কিন্তু সেগুলো প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ট্রাক ঢোকাতে পেরেছি। যা সাগরে এক ফোঁটা পানির মতো।”
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, খাদ্য ও ওষুধের অভাবে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, যা আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
Leave a comment