Home আন্তর্জাতিক গাজায় খাদ্য না পৌঁছালে ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে
আন্তর্জাতিক

গাজায় খাদ্য না পৌঁছালে ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে

Share
Share


ইসরায়েলের কঠোর অবরোধে জর্জরিত গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটের কারণে শিশুদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি ত্রাণ না পৌঁছালে গাজায় ১৪ হাজারের বেশি শিশু মৃত্যুবরণ করতে পারে।
আজ সোমবার গাজা নগরীর একাধিক আশ্রয়শিবিরে দেখা গেছে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষ খাবার ও পানির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অধিকাংশ আশ্রয়শিবিরে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, টয়লেট ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় অনেক শিশু হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মারা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো।
ইসরায়েল গত বছর অক্টোবর থেকে গাজার ওপর সামরিক অভিযান জোরদার করে এবং সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ প্রবেশ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। রাফা ও কার্নি ক্রসিং দিয়ে সীমিত পরিসরে কিছু ত্রাণ প্রবেশ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ইউনিসেফ জানিয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ১০টি শিশু অপুষ্টি বা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শিশুই চিকিৎসা বা খাবার না পেয়ে মৃত্যুর কোঠায় পৌঁছে যাচ্ছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ, যার মধ্যে ১৪ হাজারের বেশি শিশু। প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে ত্রাণ ও ওষুধের অভাবে শিশুরা দ্রুত মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। ইউনিসেফ বলছে, পরিস্থিতি এখন এমন যে, যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি খাদ্য, পানি, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা গাজায় না পৌঁছায়, তাহলে হাজার হাজার শিশু বাঁচানো সম্ভব হবে না।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজা এখন শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। যুদ্ধ নয়, এই মৃত্যু ঠেকাতে এখন বিশ্বকে মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে হবে।” তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও নির্বিঘ্ন ত্রাণ পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও মিশরসহ একাধিক দেশ গাজায় মানবিক করিডোর চালু করার দাবি তুলেছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো ব্যাপক আকারে ত্রাণ প্রবেশে রাজি হয়নি। তারা নিরাপত্তার কথা বলে সীমিত ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে, যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।
ইতিমধ্যে গাজা থেকে যেসব ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, শিশুরা প্লাস্টিকের পাত্র হাতে নিয়ে পানির জন্য অপেক্ষা করছে, অপুষ্টিতে হাড়সর্বস্ব দেহ নিয়ে অনেকে কাতরাচ্ছে। বহু শিশু শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও তীব্র জ্বর নিয়ে অনাহারে দিন পার করছে।
ইউনিসেফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই অবরোধকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, “এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্ব এক ভয়ংকর শিশু গণহত্যার সাক্ষী হতে যাচ্ছে।” তারা বলেছে, শিশুদের জীবন বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যাপক আকারে মানবিক সহায়তা। অন্যথায় বিশ্ব বিবেকের সামনে এই মৃত্যুর দায় এড়ানো কারও পক্ষে সম্ভব হবে না।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

পুরোনো বিমানবন্দরে ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে আয়োজিত বিশেষ ‘এয়ার শো’ দেখতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে...

বিজয় দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে র‌্যাবের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনসমাগমস্থল এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত...

Related Articles

সিলেটে তরুণদের বিদেশমুখিতা বাড়ছে, কারণ ….

সিলেটকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় লন্ডন’। যুক্তরাজ্যে সিলেটি প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কারণে এই...

রাশিয়ার রোস্তভে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা: নিহত ৩

রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ অঞ্চলে রাতভর চালানো ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত...

ওবায়দুল কাদের ও সাদ্দামসহ ৭ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী...

ভারী বৃষ্টিতে রক্তিম রঙে ঢেকে গেল ইরানের হরমুজ দ্বীপের সমুদ্র

ইরানের পারস্য উপসাগরে অবস্থিত হরমুজ দ্বীপে ভারী বৃষ্টির পর স্থানীয় বাসিন্দা ও...