গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ‘অনাহার সৃষ্টির মাধ্যমে জাতিগত নিধন’ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন খ্যাতনামা দুর্ভিক্ষ-বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পরিকল্পিত অবরোধ ও খাদ্য প্রবাহ বন্ধ করে এমন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা শিশুদের জন্য দ্রুত মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডি ওয়াল বলেন, গাজায় জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে পারছে না। কারণ অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে না কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইসরায়েলের বাধার মুখে সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণকর্মী প্রবেশ করতে পারছেন না, ফলে তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সতর্ক করেন, “দুর্ভিক্ষ লুকিয়ে রাখা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করারই একটি কৌশল।”
এই প্রেক্ষাপটে গাজায় যা ঘটছে, তা কোনো আকস্মিক মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের উদাহরণ। বিশ্বখ্যাত বই Mass Starvation: The History and Future of Famine–এর লেখক ডি ওয়াল বলেন, “যদি ইসরায়েল চাইত, তবে গাজার প্রতিটি শিশু আগামীকাল সকালে নাশতা পেতে পারত। এটি একমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।”
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের শুরু থেকে গত ২১ মাসে গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিতে অন্তত ১২২ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু। এছাড়া বিতর্কিত মানবিক সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ বা জিএইচএফ–এর ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
জিএইচএফ পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, এবং এটি ১১ সপ্তাহের অবরোধ শেষে গত মে মাসে কার্যক্রম শুরু করে। তবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা শুরু থেকেই এর কার্যক্রম ও ত্রাণের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
ডি ওয়ালের ভাষায়, “আপনি যদি একটি দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির সহজ পদ্ধতি জানতে চান, তাহলে প্রথমে সেই অঞ্চলের তথ্যপ্রবাহ ও ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিন। তারপর বলুন, কেউ তো দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেনি।”
ইউএনআরডব্লিউএ সূত্রে জানা যায়, গত চার মাসে মিশর ও জর্ডানে প্রায় ছয় হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে আছে, শুধুমাত্র ইসরায়েলের অনুমতির অভাবে। অবরোধের আগে প্রতিদিন গাজায় ছয় শতাধিক ট্রাক প্রবেশ করত, যা এখন প্রায় শূন্যের কোটায়।
গাজা আজ এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, যেখানে বেঁচে থাকার লড়াইটাই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে ডি ওয়াল ও অন্যান্য বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে নিরবতা ভেঙে অবিলম্বে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা—না হলে হাজার হাজার শিশু খুব দ্রুতই মারা যেতে বাধ্য হবে।
Leave a comment