গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২২০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আজ রোববার হামলায় নিহত হয়েছেন আশরাফ আবু নার নামে এক স্থানীয় সাংবাদিক। গাজার জনসংযোগ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতে সাংবাদিকদের মৃত্যু এই পেশার ওপর চলমান নিপীড়নের ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট করেছে।
এছাড়া আজকের দিনেও গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস, উত্তরে জাবালিয়া ও মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাতে চালানো হামলায় অন্তত ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই দীর্ঘ সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
গাজা সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধার সরঞ্জামের অভাবে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর জানান, অন্তত ৯ হাজার ৭০০ জন মানুষ চাপা পড়ে মারা গেছেন, যাদের উদ্ধারে কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার কথা জানিয়েছে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডস। তাদের দাবি, গত ২০ মে খান ইউনিসের আল-কারারা এলাকায় একটি বাড়িতে অবস্থান করা ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এতে বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হন।
মানবিক সংকটের দিক থেকেও পরিস্থিতি প্রতিদিনই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ইসরায়েল দাবি করলেও বাস্তবে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত বলে জানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তাদের অভিযোগ, প্রতিদিন প্রয়োজন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক, অথচ গতকাল মাত্র ৯২টি ট্রাক প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।
অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধের অভাবে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতেও খাবার শেষ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এক্সে (সাবেক টুইটার) জানায়, পরিস্থিতি এতটাই করুণ যে গাজার বাসিন্দাদের আর অপেক্ষা করার সামর্থ্য নেই।
এই সংকটে আজ অনাহারে মৃত্যু হয়েছে চার বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ ইয়াসিনের। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গাজায় খাদ্যাভাবে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৮ জনে।
গোটা উপত্যকাজুড়ে আজ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, প্রাণহানির পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও নির্মমভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। তবুও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর হস্তক্ষেপের অনুপস্থিতি গাজার পরিস্থিতিকে প্রতিদিন আরও শোচনীয় করে তুলছে।
Leave a comment