ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে একটি বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় একজন নারী চিকিৎসকের দশ শিশু সন্তানের মধ্যে ৯ জনই নিহত হয়েছে । ওই চিকিৎসক খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কাজ করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ডাঃ আলা আল-নাজ্জারের স্বামী ও তাদের এক সন্তান আহত অবস্থায় বেঁচে গেছে।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ব্রিটিশ সার্জন গ্রায়েমে গ্রুম বিবিসিকে বলেছেন, এটি অসহনীয় নিষ্ঠুরতা। বহু বছর ধরে শিশুদের জন্য কাজ করা একজন চিকিৎসক তার প্রায় সব সন্তান হারিয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা শুক্রবার খান ইউনিসে সন্দেহভাজন কিছু জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।
জানা গেছে, নাজ্জার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কর্মরত আছেন। হামলার সময় তিনি হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন। সেখানে আহত গাজাবাসীর চিকিৎসা করছিলেন তিনি। ঠিক ওই সময়েই নিজ বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলার খবর পান নাজ্জার।
শনিবার গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, হামলার পর নাজ্জারের বাসা থেকে ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণে জ্বলে যাওয়া ছোট ছোট শিশুদের দেহগুলো নাসের হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আলবোরশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, চিকিৎসক আলা আল-নাজ্জারকে তার স্বামী হামদি কর্মস্থলে দিয়ে বাসায় ফেরেন । এরপর কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের বাসায় হামলা চালানো হয়।
বৃটিশ সংবাদসংস্থা বিবিসি জানায়, আলা নাজ্জারের স্বামী তাকে হাসপাতালের কাজে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরই ইসরায়েলের বোমা হামলা হয়। এই হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় বাড়ি। ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই মারা যায়। মৃত সন্তানদের সবার বয়স ৬-১২ বছরের মধ্যে।
খান ইউনিস শহরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসক নাজ্জারের স্বামী এবং ১১ বছর বয়সী এক সন্তানকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির চিকিৎসা চলছে। শিশুদের বাবা গুরুতর জখম হয়েছেন বলে ইন্সটাগ্রামে এক ভিডিও পোস্টে জানিয়েছেন নাসের হাসপাতালের এক ব্রিটিশ সার্জন।
এই বিধ্বংসী হামলায় চিকিৎসক পরিবারটি যে ভয়াবহ শোকের মুখে পড়েছে, তা বিশ্ববাসীর হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
এই মানবিক বিপর্যয়ের মাঝে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজায় অবরোধের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। গাজার ২১ লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীর মাত্র অল্প অংশই পৌঁছাতে পেরেছে। খাবার, পানি এবং ওষুধের অভাবে স্থানীয় জনগণ নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা ও নারী গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টির শিকার হচ্ছেন। গাজার এই মানবিক সংকট ও যুদ্ধ অবরোধ তুলে নেওয়া না হলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বাড়বে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছেন।
Leave a comment