দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাওয়ায় খেলাপি ঋণের বাস্তব পরিস্থিতি সামনে আসতে শুরু করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা, আর শেষ তিন মাসেই বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলাম খেলাপি ঋণ বাড়বে, এবং সেটাই হয়েছে। তবে এখনো সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়নি, সামনে আরও বাড়তে পারে। কোনো তথ্য গোপন করা হবে না।’ তিনি আরও জানান, নতুন ঋণ যেন খেলাপিতে পরিণত না হয়, সেজন্য কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কয়েকটি বড় গ্রুপ বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করলেও নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারা খেলাপি তালিকায় চলে গেছে। এর মধ্যে এস আলম, বেক্সিমকোর মতো শীর্ষ ঋণগ্রহীতারাও রয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা তিন মাস আগেও ছিল ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে হিসাবপদ্ধতির পরিবর্তনকেও দায়ী করেছেন। আগে কোনো ঋণ পরিশোধে ৬ মাস দেরি হলে সেটিকে খেলাপি ধরা হতো, এখন এই সময়সীমা কমিয়ে ৩ মাস করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোর নীতি অনুসরণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, কিছু দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের পরিকল্পনা চলছে এবং আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বীমা তহবিলের মাধ্যমে অর্থ ফেরতের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হবে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। তবে পরবর্তী সময়ে নানা শিথিলতার মাধ্যমে তা কম দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। পুনঃতপশিল ও বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে কিছু ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেওয়া হয়, যা ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। এখন গোপন রাখা খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে।
Leave a comment