ব্যানার, সাজসজ্জা, বাদ্যযন্ত্র, লোকজনের হই-হুল্লোড়, কেউ করছে ভিডিও, আবার কেউবা তুলছে সেলফি। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে এ যেন কারো বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু আদতে তা নয়
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঝাঁটিবুনিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক সোহাগ মৃধা কোরবানি উপলক্ষে তার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি ষাঁড় উপহার দেয়ার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে এমন আয়োজন করেছেন। এজন্য তিনটি মিনি ট্রাক ভাড়া করার পাশাপাশি আয়োজন করেন গেঞ্জি, ক্যাপ ও খাবার দাবারের। নান্দনিক সাজে সজ্জিত হয়ে ষাঁড় সহ ৫০ জনের বহর নিয়ে সোহাগ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
পরম যত্নে ছয় বছর ধরে লালিত ষাঁড়টির নাম-‘কালো মানিক’। ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩৫ মন। ২০১৮ সালের শেষের দিকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী কিনেছিলেন সোহাগ। অল্প সময়ের মধ্যে গাভীটি একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভীটি বিক্রি করে বাছুরটিকে রেখে দেন তিনি। আর সেই বাছুরই আজকের এই কালো মানিক। গত বছর কোরবানির সময়ে স্থানীয় বাজারে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল ষাঁড়টির। কিন্তু সোহাগের সাফ কথা-‘বিক্রির জন্য এই ষাঁড় না -এটা তার নেত্রীর জন্য।’
সোহাগ মৃধা বলেন, ২০২৩ সালে এক কৃষক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে একটি গরু উপহার দিয়েছিলেন। তা দেখে মনে মনে ইচ্ছা হয়েছিল-যদি কোনো দিন সুযোগ হয় তবে আমিও প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি গরু উপহার দেবো। আজ সেই সুযোগ এসেছে। নেত্রী যদি এই গরু গ্রহণ করেন, তাহলে আমি ও আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে। আশা করি, আমাকে নিরাশ করবেন না নেত্রী
সোহাগ বলেন, ভাইরালের জন্য না। আমি সত্যিই চাই, আমার কালো মানিক নেত্রীর কোরবানির জন্য যাক। এতে আমার কোনো লাভ নেই-শুধু আছে ভালোবাসা।’
বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকায় ষাঁড়টি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। প্রথমে অনেকে ভেবেছিল, সোহাগ হয়তো একটু বাড়াবাড়ি করছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তার বাড়ির উঠোনে লোকজনের ভিড় ও তোড়জোড় দেখে, কেউই আর অবিশ্বাস করেননি ।
সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘ছোটবেলা হইতে ও বিএনপি ভালোবাসে। কয় বছর ধইরা কয়-এই গরু নেত্রীরে দিব। সংসারে কত কষ্ট গেছে, কত সময় ভাত কম খাইছি; কিন্তু ওরে থামাই নাই। মানিকরে আমরা ঘরের লোক বানাইয়া রাখছি। আইজ লইয়া যাইতেছে। চউখ্যে পানি আসে, কিন্তু মনে শান্তি লাগে-নেত্রী যদি গ্রহণ করেন, তয় আমরা ধন্য হইয়া যামু।’
সোহাগের স্ত্রী পলি বেগম বলেন, ‘ ৬ বছর সন্তানের মতোই আমরা কালো মানিকরে মানুষ করছি। সর্দি লাগলে ওষুধ দিছি, খাইছে কি না সেই দুশ্চিন্তা করছি। আজ যাইতেছে ঢাকায়, ঘর ফাঁকা লাগবে। কিন্তু এই কান্না দুঃখের না-এটা খুশির কান্না। নেত্রী যদি এই গরু গ্রহণ করেন, তয় আমাদের সব কষ্ট সার্থক হবে।’
Leave a comment