‘আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। এই পথটাই আমি বেছে নিয়েছি মা, মানুষকে সাহায্য করার জন্য।’ মৃত্যুর ঠিক আগে মায়ের উদ্দেশ্যে মোবাইলে রেকর্ড করা স্বাস্থ্যকর্মী রেফাত রাদওয়ানের কথা এটি।
সেই ভিডিও রেকর্ডে শোনা যায় কালিমা শাহাদাৎ পাঠ করাও… যা মৃত্যুর মুখে বলেন মুসলমানরা। রেফাত রাদওয়ানের সেই ভিডিওতে বুঝা যাচ্ছে সেখানে তীব্র গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে , ভয়ে কাঁপছে তার কণ্ঠ।
‘ইহুদিরা আসছে, ইহুদিরা আসছে’ ফুটেজ শেষ হওয়ার ঠিক আগে ইসরায়েলি সৈন্যদের উল্লেখ করে তাকে বলতে শোনা যায় ।
গত ২৩ মার্চের ভিডিও এটি। যেটি প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ও ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি চলন্ত গাড়ির ভিতর থেকে শুট করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, একটি লাল ফায়ারট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলো রাতের কোনো এক সময় চলছে। রাস্তার পাশে আরেকটি গাড়ির পাশে থামে গাড়িগুলো। পরে দুজন ইউনিফর্মধারী ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামেন। এরপরই প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়।
সেই ভিডিওতে দু’জন চিকিৎসকের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। একজন বলছেন, ‘গাড়ি গাড়ি’ এবং অন্যজন উত্তর দিচ্ছেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।’ এর কয়েক সেকেন্ড পরে, গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় এবং ভিডিওটি কালো হয়ে যায়।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি গাজায় অন্যান্য উদ্ধারকারীদের সঙ্গে নিহত রেফাত রেদওয়ানের মোবাইল থেকে একটি ভিডিও উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ।
৫ এপ্রিল ভিডিওটি তারা প্রকাশও করেছে। এতে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত অ্যাম্বুল্যান্স ও জ্বলজ্বল করা জরুরি আলোর মধ্যে তীব্র গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
জাতিসংঘ ও পিআরসিএস জানিয়েছে, ২৩ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনীর এক হামলায় ১৫ জন মানবিক সহায়তা কর্মী নিহত হন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা কোনো অ্যাম্বুল্যান্সে ‘এলোপাতাড়ি হামলা’ চালায়নি, বরং ‘সন্দেহজনক যানবাহনে’ আসা ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়েছে। কিন্তু পিআরসিএস যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে তাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবির বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে হেডলাইট এবং জরুরি আলো স্পষ্টভাবে জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।
সাহায্যকর্মীদের মৃত্যু আন্তর্জাতিক নিন্দার জন্ম দিয়েছে। ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ওসিএইচএ-এর প্রধান জোনাথন হুইটল বলেছেন, ‘নিহতদের মরদেহ ইউনিফর্ম ও হাতে গ্লাভস পরা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’ পিআরসিএস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলের বক্তব্য যে মিথ্যা তা এই ভিডিও দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে। এই ফুটেজ সত্যকে উন্মোচিত করে
নিহতদের মধ্যে আটজন পিআরসিএস কর্মী, ছয়জন গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার সদস্য এবং ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার একজন কর্মী ছিলেন। রাফাহ-এর কাছে তাদের মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল, যাকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় গণকবর হিসেবে বর্ণনা করেছে।
Leave a comment