Home জাতীয় অপরাধ কেরানীগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
অপরাধ

কেরানীগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

Share
Share


নারী নির্যাতনের ভয়াবহ এক ঘটনার বিচার শেষে ঢাকায় এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আদালত। যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে কেরানীগঞ্জের মিজান সরদার (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে আজ রবিবার মৃত্যুদণ্ড দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪–এর বিচারক মুন্সি মো. মশিউর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।

মামলার নথি অনুযায়ী, মিজান সরদার তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের কদমতলীর একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার একটি ছেলে (৭) এবং একটি মেয়ে (৬) রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই মিজান যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ প্রয়োগ করতেন। স্ত্রীর পরিবার ২০ লাখ টাকার একটি জমি ও ৭ লাখ টাকা মূল্যের একটি দোকান করে দিয়েও তাঁর নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি ভুক্তভোগী নারী।

২০২৩ সালের ৬ মে রাতে সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে যায়। আরও যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়ার একপর্যায়ে মিজান স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রাতের খাবারের পর যখন স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, তখন মিজান একটি কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করেন এবং তা সরাসরি স্ত্রীর শরীরে ঢেলে দেন। আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়া সেই গরম তেলে দগ্ধ হয়ে চিৎকার করে ওঠেন স্ত্রী। পরিবার ও স্থানীয়দের সহায়তায় তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর আগে ওই নারী আদালতে জবানবন্দি দেন, যেখানে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এর ভিত্তিতে তাঁর বাবা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ অভিযুক্ত মিজানকে গ্রেপ্তার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে সে।

তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ ১২ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে অবশেষে আজ রোববার বিচারক মিজান সরদারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন।

এই রায় দেশের নারী নির্যাতনবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের এক নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতের বাইরে অনেকেই এই রায়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, “নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুধু কঠোর শাস্তিই নয়, সামাজিক সচেতনতা আর প্রতিরোধও জরুরি।”
এ রায় হয়তো কোনো একটি পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি ফিরিয়ে দিতে পারবে না, তবে অন্যদের জন্য এটি একটি সতর্ক বার্তা হয়ে থাকুক—এটাই সকলের প্রত্যাশা।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, নিহত হয়েছে পাইলট

ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন পাইলট । জাগুয়ার নামক যুদ্ধবিমানটির পাইলট ছিলেন নিহত ব্যক্তি। স্থানীয় সময় বুধবার (৯...

রংপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস পড়েছে পুকুরে , নিহত ২ 

রংপুরের পীরগাছায় বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে দুইজন নিহত ও আহত হয়েছেন ২০ জন । পীরগাছা উপজেলার দেউতি বেলতলা...

Related Articles

গাইবান্ধায় ‘কচু তোলা’ ও ‘আম পাড়া’ নিয়ে দুই খুন

গাইবান্ধার দুটি উপজেলায় পারিবারিক বিরোধ থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন নিহত...

বিমানে বোমার হুমকি, তল্লাশিতে কিছু না পেয়ে কাঠমান্ডু গেল উড়োজাহাজ

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে...

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ড: নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় বাংলাদেশ

  রাজধানীর পুরান ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে মাথা থেঁতলে মো....

পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, যুবদলের ৪ নেতা গ্রেপ্তার

ঢাকার পুরান মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ...