খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এখনো স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশে ফিরতে পারেনি। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় শিক্ষকেরা পঞ্চম দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতিতে রয়েছেন। যদিও প্রশাসন এবং শিক্ষক নেতাদের বক্তব্যে সমাধানের আভাস মিলছে, তবুও আজ বৃহস্পতিবারও কোনো ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে চাইলেও শিক্ষকদের অনড় অবস্থান অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, “পরিস্থিতি এখন শান্ত। শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অস্থিরতা নেই, উভয় পক্ষ অপেক্ষায় আছে। মনে হচ্ছে ভালো কিছু হতে চলেছে।”
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এই ঘটনার জেরে দীর্ঘ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হযরত আলীকে ১ মে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নবনিযুক্ত উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রশাসন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি, তবে শিক্ষক সমিতির নেতারা প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য জানান, সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেইসাথে ১৮ ফেব্রুয়ারির সহিংস ঘটনার তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন এক সাধারণ সভা শেষে জানান, শিক্ষকদের লাঞ্ছনায় জড়িতদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। সেইসাথে কুয়েট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সাইবার বুলিং ও সামাজিক অপমানের ঘটনার বিচার এবং সামাজিক মাধ্যমে কুয়েটবিরোধী অপপ্রচারে জড়িত পেজ ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়।
তিনি বলেন, “আমরা সাত কর্মদিবস সময় বেঁধে দিয়েছিলাম, তবে এখন মনে হচ্ছে তার আগেই সমাধান সম্ভব। আমরা দেখছি, নতুন উপাচার্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন।”
এদিকে শিক্ষার্থীরাও চান সঙ্কটের দ্রুত সমাধান হোক। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “আমরা শিক্ষকদের কাছে গিয়ে বারবার ক্ষমা চাচ্ছি। বিচার হোক, কিন্তু আমাদের ক্লাসও চলুক। দীর্ঘ সময় ধরে পাঠদান বন্ধ থাকায় আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।”
কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, শিক্ষকদের অনীহার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। আপাতত সবাই অপেক্ষায়—এই অচলাবস্থার শেষ কোথায়।
Leave a comment