রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত মাহবুব (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে নিহত তরুণীর পরিবারের দাবি, এটি আত্মহত্যা নয়—স্বামী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছেন।
নিহত আকলিমা আক্তার (১৯) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা। দেড় বছর আগে মাহবুবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁরা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন। বিয়ের সময় মাহবুব নিজেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বলে পরিচয় দিলেও পরে একটি রঙ কারখানায় চাকরি নেন। তবে পরিবারসূত্রে জানা যায়, পরবর্তী সময়ে মাহবুব অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন এবং কর্মজীবনে অমনোযোগী হয়ে ওঠেন। এতে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নেমে আসে।
নিহত আকলিমার ভাই মো. সুমন জানান, তাঁর বোন প্রায়ই মাহবুবের নির্যাতনের শিকার হতেন এবং বিষয়টি ভাইদের জানান। আকলিমা কান্নাকাটি করতেন, শারীরিকভাবে নিপীড়নের অভিযোগও করেছিলেন। গত ২৬ মে দুপুরে আকলিমার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাসায় ছুটে যান। সেখানে পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় আকলিমার মরদেহ উদ্ধার করে।
মাহবুবের দাবি, আকলিমা আত্মহত্যা করেছেন। তবে আকলিমার ভাইয়ের ভাষ্য, “আমার বোনকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছেন মাহবুব। আত্মহত্যার গল্প সাজিয়ে তিনি দায় এড়াতে চাইছেন।”
মামলার বাদী সুমনের অভিযোগে বলা হয়েছে, অনলাইনে জুয়ার কারণে মাহবুব সংসারে অস্থিরতা তৈরি করেন। আকলিমার ভাইয়েরা অর্থসহায়তা দিলেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। মাহবুবের বিরুদ্ধে তাঁরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
এ বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম জানান, “মামলার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আপাতত আত্মহত্যা হিসেবে ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, তবে পরিবারের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ওসি আরও বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধের একটি কারণ ছিল শোবার খাট নিয়ে। মাহবুব তাঁর শ্যালকদের কাছে খাট চেয়েছিলেন, না পাওয়ায় দাম্পত্য জীবনে আরও উত্তেজনা বাড়ে।
আকলিমার বড় বোনের স্বামী নূর আলম জানান, “মাহবুব বিয়ের আগে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। পরে শুনি, সে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। তার এই নেশাই আমাদের পরিবারে এমন দুঃখজনক পরিণতি এনেছে।”
বর্তমানে মাহবুব পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আদালতে তিনি আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ অস্বীকার করে জামিন চেয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।
Leave a comment