কলম্বিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রামীণ এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাস পাহাড়ি খাদে পড়ে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মেডেলিন শহরের কাছে অ্যান্টিওকিয়া বিভাগের বেলো এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্যমতে, বাসটি প্রায় ৪০ মিটার গভীর একটি খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু হয় এবং আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা ভ্রমণ করছিলেন। তারা মেডেলিনের কাছে বেলোর একটি স্কুলের শিক্ষার্থী এবং স্নাতক উদযাপনের অংশ হিসেবে কলম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের জনপ্রিয় সৈকত শহর টোলু ও কোভেনাস ভ্রমণে গিয়েছিলেন। আনন্দভ্রমণ শেষে ফেরার পথেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
বেলোর মেয়রের কার্যালয়ের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, নিহত ও আহতদের মধ্যে কতজন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থী ছিলেন—তা নির্ধারণে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কারণে উদ্ধার ও শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে বলে জানান তারা।
অ্যান্টিওকিয়া বিভাগের গভর্নর আন্দ্রেস জুলিয়ান রেন্ডন সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। দুর্ঘটনার পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটি, চালকের অসাবধানতা নাকি সড়কের অবস্থা দায়ী—সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গভর্নর রেন্ডন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য শেয়ার করেন। সেখানে ওই শিক্ষার্থী বলেন, “আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনতে পেলাম, এরপর আর কিছুই মনে নেই।”
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিরিখাত থেকে আহতদের স্ট্রেচারে করে উদ্ধার করেন। খাড়া পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় উদ্ধারকাজে সময় লেগেছে এবং এতে স্থানীয় বাসিন্দারাও সহায়তা করেন। উদ্ধার অভিযান চলাকালে জরুরি সেবা সংস্থাগুলো হেলিকপ্টার ও ভারী সরঞ্জাম ব্যবহারের কথা বিবেচনা করে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের মাথা ও শরীরে গুরুতর আঘাত রয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্রোপচারসহ বিশেষায়িত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি লেখেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে রাষ্ট্র রয়েছে।” একই সঙ্গে তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
এই দুর্ঘটনা আবারও কলম্বিয়ায় সড়ক নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থী পরিবহনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তদন্তের ফলাফল প্রকাশের পরই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায় নির্ধারণ সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ।
Leave a comment