জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের দাখিল করা অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন—আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দীন নাসিম, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রসিকিউশন টিম ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে আসামিদের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জুলাই–আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উসকানিমূলক বক্তব্য ও নির্দেশনার ফলে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, ওবায়দুল কাদেরের প্রকাশ্য বক্তব্য ও সরাসরি নির্দেশনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডার বাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। এতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে এবং বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আসামিদের দ্রুত আদালতের আওতায় আনা জরুরি।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরোয়ানা জারির মাধ্যমে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম একটি দৃশ্যমান ধাপে প্রবেশ করল। তাদের ভাষায়, “শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া প্রমাণ করে যে, ট্রাইব্যুনাল বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।”
এই আদেশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, জুলাই–আগস্টে সংঘটিত সহিংসতায় বহু শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার নিরপেক্ষ বিচার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তাদের মতে, বিচারিক প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ন্যায়বিচারের আশা জোরদার হবে।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অতীতে এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
Leave a comment