এ বি এম মূসা (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ – ৯ এপ্রিল ২০১৪) ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, সম্পাদক, কলামিস্ট এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা। তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি সংবাদ পত্রিকা, টেলিভিশন টক শো এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সাংবাদিকতা জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক ও সোচ্চার কণ্ঠ, যা তাকে জনগণের নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ ধর্মপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা মূসা ১৯৫০ সালে সাংবাদিকতায় পদার্পণ করেন। দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে সাংবাদিকতার শুরু হলেও, পাকিস্তান অবজারভারের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্ক তাকে সাংবাদিকতা জগতের একজন প্রতিষ্ঠিত মুখে পরিণত করে। তিনি পাকিস্তান অবজারভারে রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার, এবং বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চিত্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে তিনি ফেনী আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার সাংবাদিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল ২০০৫ সালে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা।
এ বি এম মূসা সরকার এবং প্রশাসনের সমালোচনায় ছিলেন নির্ভীক। তার লেখনির মাধ্যমে তিনি গণতান্ত্রিক অধিকার, সমাজের সমস্যা এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের পক্ষে কণ্ঠস্বর তুলে ধরতেন। মৃত্যুর আগে টেলিভিশনে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে তার আলোচনা জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং দেশের সাংবাদিক সমাজে তাকে গুরুজন হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
এ বি এম মূসা ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান, যিনি শুধু সাংবাদিকতা নয়, সমাজের সঠিক দিকগুলো তুলে ধরে দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার চেতনাকে শক্তিশালী করেছেন। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল তার মৃত্যু দেশের সাংবাদিকতার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি “মুজিব ভাই” নামক একটি বই লিখেছিলেন, যা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বর্ণনা দেয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন, যা তার জীবনের পথচলার অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রামের প্রতিফলন।
এ বি এম মূসার অবদান বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে অম্লান থাকবে, এবং তার নাম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Leave a comment