মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “একাত্তর ও চব্বিশের দালালদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। সামনের বাংলাদেশে আমাদের বিজয় আসবে।”
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জিত হলেও সেই আদর্শ বাস্তবায়িত হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে, যা জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তার মতে, বিজয় দিবস কেবল অতীত স্মরণের দিন নয়; এটি অসমাপ্ত মুক্তির লক্ষ্য পূরণের নতুন অঙ্গীকারের দিন।
তিনি আরও বলেন, “আজ যারা পতিত শক্তি হিসেবে পরিচিত, তারা আবারও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন বানচাল করা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করা এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখাই তাদের লক্ষ্য।” এ ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজনৈতিক সচেতনতা ও নাগরিক ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ জনগণকে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন ও সংগঠিত হতে হবে। তার ভাষায়, “গণতান্ত্রিক আন্দোলন টিকিয়ে রাখতে হলে নাগরিকদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।”
ভোট ও নির্বাচন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, তার দল প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার পথে হাঁটতে চায়। এনসিপির প্রার্থীরা ‘গণভোটের প্রার্থী’ হিসেবে মানুষের কাছে যাবেন—এমন ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই সংস্কারের পক্ষে একটি গণজোয়ার তৈরি হোক। জনগণ নিজেরাই ঠিক করুক, তারা কেমন রাষ্ট্র ও রাজনীতি চায়।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতির জন্য তরুণদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। তার মতে, তরুণ প্রজন্মই পারে পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। “যে বাংলাদেশে ক্ষমতার অপব্যবহার হবে না, রাষ্ট্র হবে নাগরিকের মর্যাদা রক্ষার গ্যারান্টর”—এমন প্রত্যাশার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, একাত্তরের চেতনা মানে কেবল একটি দল বা গোষ্ঠীর ইতিহাস নয়; এটি জনগণের সম্মিলিত লড়াইয়ের ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক বয়ানে বন্দী না রেখে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, চব্বিশের গণ-আন্দোলনের অভিজ্ঞতাও দেখিয়েছে—জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো দমননীতি টেকসই হয় না।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে এনসিপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বিজয় দিবসের সকালে সেখানে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নানা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমাগম।
শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই বিজয় দিবসে আমরা শপথ নিচ্ছি—একাত্তরের আদর্শকে সামনে রেখে, চব্বিশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সব ধরনের দালাল ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এই সংগ্রাম চলবে।”
Leave a comment