গাজার আকাশে হয়তো চাঁদ উঠবে ঈদের আগমনী বার্তা নিয়ে, কিন্তু ভাঙা ঘর, খালি হাড়ি আর ক্ষুধার্ত মুখগুলোর কাছে সে বার্তা শুধুই এক অদৃশ্য বিলাসিতা। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে দ্বিতীয় বছরের মতো পবিত্র ঈদুল আজহাও রূপ নিচ্ছে গাজার মানুষের জন্য এক অন্তহীন বেঁচে থাকার সংগ্রামে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধ এবং চলতি বছরের মার্চ থেকে আরোপিত অবরোধের ফলে গাজা এখন কার্যত এক ঘেরাটোপে বন্দি। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ অবরোধের কারণে পশু প্রবেশ তো দূরের কথা, ঈদের দিনে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে এক টুকরো মাংসও জুটবে না বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের বরাতে জানা গেছে, গাজায় ঈদুল আজহার আমেজ যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। গাজার মানুষ আজ শুধুই জীবনের জন্য লড়ছে, উৎসব বা কোরবানির মতো ধর্মীয় রীতি তাদের কাছে এখন অধরা স্বপ্ন।
গাজার বাসিন্দা আবু হাতিম আল-জারকা জানান, সীমিত পরিসরে কেউ কেউ পশু পালন করলেও তা এতটাই কম যে পুরো অঞ্চলের জন্য তা অকিঞ্চিৎকর। তার নিজের পশুগুলোর জন্যও প্রয়োজনীয় পানি জোগাড় করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, “গাজায় এখন যে পরিমাণ পশু আছে, তা মোটেই যথেষ্ট নয়। দাম এত বেশি যে গরিব মানুষের পক্ষে তা কেনা সম্ভব না।”
অন্যদিকে বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ঈদ এখন আর আনন্দের নাম নয়। কয়েক মাস ধরেই তারা মাংস তো দূরে থাক, পুষ্টিকর খাবার পর্যন্ত খেতে পারছেন না। বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া, মাংস ও সবজি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বহু মানুষ মাসের পর মাস শুধু শুকনো রুটি বা সামান্য দানাদার খাদ্যে জীবনধারণ করছেন।
ইসরায়েলের দমননীতিকে গাজাবাসী দেখছে শুধু বোমা, গুলি বা বিমান হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি এখন খাদ্য ও পানির মতো মৌলিক চাহিদাকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ভয়াবহ ফলশ্রুতি গাজার সমাজজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভিক্ষ, অপুষ্টি ও মৃত্যু।
এই সংকটপূর্ণ বাস্তবতায় ঈদের দিনটি ফিলিস্তিনিদের কাছে আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে না। এটি হয়ে উঠেছে আরও একটি পরীক্ষার দিন, যেদিন তারা বাঁচার সংগ্রামে নামবে নতুন করে, কেবল এক মুঠো খাবারের আশায়।
Leave a comment