নিজেকে খুঁজতে গিয়ে ধর্মান্তরের পথ বেছে নিলেন এ আর ধ্রুব। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে তিনি জানান, ইসলাম ধর্মই তাঁর অন্তরের শান্তি, জীবনের মানে এবং আত্মার মুক্তির পথ হয়ে উঠেছে। আজ থেকে তিনি আজীবনের জন্য ইসলাম ধর্ম পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি আইনি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছেন।
ধ্রুব বলেন, ‘‘আমি বহুদিন ধরে হতাশা, বিষণ্নতা আর জীবনের সংকটে ভুগছিলাম। একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছাই, যেখানে আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে রক্ষা করেছেন।’’ এই যাত্রায় কুরআনের আয়াত তাঁকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একসময় হিন্দু ধর্মাবলম্বী ধ্রুব বলেন, তিনি বহু দেব-দেবীর মধ্যে বিশ্বাস রাখলেও মনে প্রশান্তি পেতেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে সবসময় একটা শূন্যতা অনুভব করতাম। সবকিছু থাকা সত্ত্বেও মনে হতো, কিছু একটা নেই। সেই প্রশ্ন থেকেই আমি উত্তর খুঁজতে শুরু করি—আমার সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? আমি কে? কোথা থেকে এলাম?’’
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ধ্রুব হয়ে ওঠেন ধর্মতত্ত্ব অনুসন্ধানী। বহু ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন করেন, নিজেকে বারবার ফিরে দেখেন। একপর্যায়ে কুরআন তাঁকে আলোড়িত করে। তিনি বলেন, ‘‘আমি কুরআন পড়েছি এবং বিস্মিত হয়েছি। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থও পড়েছি, কিন্তু কুরআনই আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছে, আমাকে শান্তি দিয়েছে।’’
ফেসবুক পোস্টে ধ্রুব বিভিন্ন কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, আল্লাহর প্রতি ভরসা, আত্মসমর্পণ এবং সত্য অনুসন্ধানই তাঁকে ইসলামের পথে নিয়ে এসেছে। ‘‘আমি যখন সত্য খুঁজছিলাম, তখন আমি প্রস্তুত ছিলাম যেকোনো সত্যকে গ্রহণ করার জন্য, যত কঠিনই হোক। আর সত্যের পথই আমাকে ইসলামে নিয়ে এসেছে।’’
এই পরিবর্তনের সময় নিজের পরিবারকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাও প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশেষ করে তাঁর পিতার মৃত্যু তাঁকে ব্যথিত করেছে, কারণ এই সিদ্ধান্ত তিনি বাবাকে জানাতে পারেননি। তবু আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে তিনি বলেছেন, ‘‘হয়তো সবাই এখন বুঝবে না, কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনায় আমি আস্থা রাখি।’’
ধ্রুব তাঁর বন্ধু, পরিবার এবং অনুসারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, অন্তত একবার খোলা মনে কুরআন পড়তে। তাঁর ভাষায়, ‘‘তর্কের জন্য নয়, বিতর্কের জন্য নয়—শুধু নিজের জন্য। একটি খোলা হৃদয় নিয়ে, একটি কৌতূহলী মন নিয়ে। যদি আপনি সত্যিই অনুসন্ধান করেন, আল্লাহ আপনাকে পথ দেখাবেন।’’
ধ্রুবর এই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হাজার হাজার মানুষ তাঁকে অভিনন্দন ও দোয়া জানিয়েছেন। অনেকেই তাঁর সিদ্ধান্তকে ‘‘সাহসী’’ ও ‘‘আত্মার মুক্তির পথ’’ বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। এই অধিকার অনুসারে ধ্রুব নিজের বিশ্বাস পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর এই পদক্ষেপ দেশের তরুণদের মধ্যে সত্য ও আত্মশুদ্ধির অনুসন্ধানে নতুন করে ভাবনার খোরাক জোগাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই এ আর ধ্রুব খুঁজে পেয়েছেন আত্মার প্রশান্তি ও জীবনের উদ্দেশ্য। তাঁর ভাষায়, ‘‘এটাই আমি। এটাই আমার যাত্রা। আর এটাই আমার শান্তি।’’
Leave a comment