রবিবার (২৭ জুলাই) ভোর থেকে শুরু করে দিনভর ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে মেডিকেল সূত্রগুলো জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষই ছিলেন ৩২ জন।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে আরও ছয়জনের, যাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান সংকটে এখন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৩ জন, যার মধ্যে ৮৭ জনই শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৩৭৪ জন।
বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে গতকাল ইসরায়েল হয়ে মাত্র সাত থেকে ১০টি ত্রাণবাহী ট্রাক উত্তর গাজা উপত্যকায় প্রবেশের অনুমতি পায়, যার প্রতিটিতে ছিল ময়দা। তবে এসব ট্রাকের সবকটিই গাজা শহরে পৌঁছাতে পারেনি। ক্ষুধার্ত জনতা তাদের ঘিরে ধরে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য মরিয়া হয়ে পড়া মানুষজন সেই ট্রাকগুলো লুট করে। ফলে এই ট্রাকগুলো শহরের কেন্দ্রস্থলে যেখানে অধিকাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে সেখানে পৌঁছাতে পারেনি।
গাজায় চলমান ভয়াবহ খাদ্যসংকটের চিত্র তুলে ধরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরে গাজার এক-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি নাগরিক কোনো খাবারই পাননি। এ ছাড়া দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ।
রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, গাজার সব অঞ্চলে নাগরিকদের কাছে ধারাবাহিক, পরিকল্পিত ও নিরাপদ উপায়ে খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি হওয়াই একমাত্র উপায়। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে বা পথে রয়েছে, যা দিয়ে গাজার ২১ লাখ মানুষকে প্রায় তিন মাস পর্যন্ত খাওয়ানো সম্ভব। আগেই বিশ্বের বহু সংস্থা গাজার খাদ্য পরিস্থিতিকে ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এই সর্বশেষ তথ্য সে দাবিকেই আরও জোরালো করল।
গাজার খান ইউনিস ও রাফাহর উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং উত্তরাঞ্চলের গাজা সিটির কিছু অংশে ইসরায়েল কৌশলগত ও স্থানীয় পর্যায়ে মাত্র ১০ ঘণ্টার জন্য সামরিক অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এ বিরতি রবিবার সকাল ১০টা থেকে কার্যকর হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর মিলে একটি সীমিত মানবিক বিরতির বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে এই বিরতি সামনে চলবে কি না, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি। ১০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা এবং নিহত হয়েছে অনেকে।
Leave a comment