যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষার্থী মেঘা ভেমুরিকে নিষিদ্ধ করেছে। ২৯ মে, বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রকাশ্য বক্তৃতা দেওয়ার পরপরই এমআইটি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
মেঘা ভেমুরি এমআইটির ২০২৫ ব্যাচের সভাপতি ছিলেন এবং তাঁকে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান (মার্শাল) হিসেবে ভূমিকা রাখার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে ইসরায়েলকে ‘নৃশংস সামরিক বাহিনী’ হিসেবে অভিহিত করা ও এমআইটির সঙ্গে ইসরায়েলের গবেষণা সম্পর্কের বিরোধিতা করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেলিসা নোবেলস এক ইমেইলে মেঘাকে লিখেছেন, ‘আপনি পরিকল্পিতভাবে এবং বারবার স্নাতক অনুষ্ঠান আয়োজকদের বিভ্রান্ত করেছেন।’ একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, মেঘা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্নাতক অনুষ্ঠানের দিন প্রায় পুরো সময়ের জন্য ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ রাখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্যে, তিনি নির্ধারিত নিয়ম, স্থান ও পদ্ধতি উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রতিবাদ চালিয়ে গেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন মেঘা লাল কেফিয়েহ (ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতির প্রতীকী স্কার্ফ) পরে বক্তৃতায় বলেন, ‘এমআইটি একটি বিদেশি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গবেষণায় অংশ নিচ্ছে, সেটা হলো ইসরায়েলি বাহিনী। এর অর্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণে শুধু আমাদের দেশ নয়, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি, ইসরায়েল কীভাবে ফিলিস্তিনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চাইছে। এটা লজ্জার যে এমআইটি এতে অংশীদার।’ এ সময় তিনি সহপাঠীদের ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান এবং ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
মেঘা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, গত বসন্তে এমআইটির আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ইউনিয়ন ভোটের মাধ্যমে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাঁর দাবি, ‘আপনারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছিলেন এবং ক্যাম্পাসে যাঁরা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’
তাঁর এই অবস্থান এমআইটি প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও মেঘা তাঁদের আয়োজনে শৃঙ্খলা নষ্ট করেছেন।
মেঘা ভেমুরির জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আলফারেটা শহরে। আলফারেটা হাইস্কুল থেকে ২০২১ সালে স্নাতক শেষ করে একই বছর এমআইটিতে ভর্তি হন। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স, নিউরোসায়েন্স এবং ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। তিনি এমআইটির ছাত্রসংগঠন ‘রিটেন রেভল্যুশন’-এর সদস্য, যা বিপ্লবী চিন্তাধারার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত।
পূর্বে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ইউসিটি নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে গবেষণা সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর এই শিক্ষাজীবনের চূড়ান্ত মুহূর্তে স্নাতক অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা শুধু একটি শিক্ষার্থীর জন্য নয়, বরং এটি বৃহত্তর প্রশ্ন তুলেছে—বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আদৌ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নৈতিক অবস্থানের জায়গাকে কতটা সম্মান করে, আর কতখানি প্রতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
Leave a comment