ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একের পর এক ইসরাইলি হামলায় গত কয়েকদিনে নিহত হয়েছেন আরও দুই সাংবাদিক। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন আলজাজিরার সাংবাদিক হোসাম শাবাত এবং অন্যজন প্যালেস্টাইন টুডের সাংবাদিক মোহাম্মদ মনসুর। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষত যখন স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে।
গাজার বেইত লাহিয়া এলাকায় গতকাল ইসরাইলি বাহিনী একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আলজাজিরার সাংবাদিক হোসাম শাবাতকে হত্যা করে। শাবাত, আলজাজিরা মুবাশ্বেরে কাজ করতেন। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযম বলেন, শাবাত এর আগেও আরেকটি ইসরাইলি হামলায় আহত হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকেননি। আবু আযম বলেন, ‘কোনও পূর্ব সতর্কীকরণ ছাড়াই ইসরাইলি সেনাবাহিনী তার গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ’
শাবাতের সহকর্মীরা তার শেষ কথা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। শাবাত একটি পোস্টে লিখেছিলেন, “যদি আপনি এটি পড়ছেন, তাহলে এর মানে হলো আমি নিহত হয়েছি — সম্ভবত ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।”
এই পোস্টে তিনি আরও লিখেছিলেন, “গত ১৮ মাসে প্রতিটি মুহূর্ত আমি জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি। আমি কখনো পিছু হটিনি, আমি গাজার ভয়াবহতা প্রতিটি মুহূর্তে নথিভুক্ত করেছি। তারা যে সত্য কবর দেওয়ার চেষ্টা করেছে, আমি সেটি বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
আমি ফুটপাতে, স্কুলে, তাঁবুতে — যেখানেই পারি ঘুমিয়েছি। প্রতিটি দিন ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। আমি মাসের পর মাস ধরে ক্ষুধা সহ্য করেছি, তবুও আমি কখনও আমার জনগণের পক্ষ ত্যাগ করিনি। ’ শাবাত আরও লিখেছিলেন, ‘আমি এখন আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি: গাজা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করবেন না। বিশ্বকে চোখ এড়িয়ে যেতে দেবেন না। লড়াই চালিয়ে যান, আমাদের গল্প বলতে থাকুন — যতক্ষণ না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়। ’
এদিকে, সোমবার সকালে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ইসরাইলি হামলায় প্যালেস্টাইন টুডের সাংবাদিক মোহাম্মদ মনসুরও নিহত হয়েছেন। আবু আযমের মতে, মনসুর তার বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন, যখন ইসরাইলি বাহিনী তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের (জিএমও) মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় নিহত গণমাধ্যম কর্মীর সংখ্যা ২০৮ জনে পৌঁছেছে। এই পরিসংখ্যান শুধু সাংবাদিকদের ওপর হিংসাত্মক হামলার ভয়াবহতা প্রদর্শন করে না, বরং এটি প্রমাণ করে যে সংঘাতের সময় স্বাধীন সাংবাদিকতা কতটা ঝুঁকি রয়েছে।
Leave a comment