Home আন্তর্জাতিক ইলন মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও টেসলার শেয়ার পতন
আন্তর্জাতিকজাতীয়

ইলন মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও টেসলার শেয়ার পতন

Share
Share

​বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। তিন মাসে টেসলার বাজারমূল্য ৭৬৩ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে, যা কোম্পানির মোট মূল্যমানের প্রায় ৪৯ শতাংশ হ্রাস নির্দেশ করে। বিশ্লেষকরা এই পতনকে অটোমোটিভ শিল্পের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছেন। ​

টেসলার এই পতনের পেছনে দুটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে: বিশ্ববাজারে বিক্রি কমে যাওয়া এবং ইলন মাস্কের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া। মাস্কের ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন এবং ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সিতে (DOGE) তাঁর সম্পৃক্ততা কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে, টেসলার বিক্রি কমেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। ​

জে পি মরগ্যান মনে করছেন, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সিতে কাজ করা ঘিরে দেশেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণপন্থীরা যেমন এতে সন্তুষ্ট, তেমনি বামপন্থীরা ক্ষুব্ধ। তবে শেষ পর্যন্ত এই বিতর্কের ফলে টেসলার বিক্রিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে টেসলার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে; বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙচুরও হয়েছে। ট্রাম্প এ ঘটনায় টেসলার পক্ষ নিয়ে বলেছেন, তিনি দোষীদের ‘দেশীয় সন্ত্রাসী’ ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

মাস্কের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি টেসলার পরিচালনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছেন না, যা বিক্রি ও ব্র্যান্ডিং কে সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। জেপি মর্গান জানিয়েছেন, টেসলার শেয়ারদরের লক্ষ্যমাত্রা ৪১ শতাংশ কমিয়ে ১৩৫ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, টেসলার পর্ষদকে নতুন সিইও খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কিছু বিশ্লেষক, তারাই একসময় মাস্কের ভক্ত ছিলেন। তারা মনে করেন, মাস্ক টেসলাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করছেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি হলো, বিনিয়োগকারীরা এত দিন মাস্কের উদ্ভট ও খ্যাপাটে আচরণ সহ্য করেছেন। এই মাস্ক একসময় বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন; একসময় কোভিড-১৯ নিয়ে অপতথ্য ছড়িয়েছেন; জনসমক্ষে ব্যবসায়িক অংশীদারদের সমালোচনা করেছেন। অন্যান্য সিইও বা প্রধান নির্বাহীর এ ধরনের আচরণ হয়তো সহ্য করা হতো না, কিন্তু মাস্ক এত দিন বেঁচে গেছেন।

 

এমনকি মাস্ক অনেক সময় শিশুতোষ আচরণ করলেও বিনিয়োগকারীরা মেনে নিয়েছেন কেবল একটি কারণে। সেটা হলো, মাস্ক শেষ পর্যন্ত ব্যবসা ঠিক রাখতে পেরেছেন।
ইলন মাস্কের আয়ের বড় অংশই টেসলা থেকে আসে, যেখানে তাঁর শেয়ার ১৩ শতাংশ। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার ফলে তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মনোযোগ কমে গেছে, যা টেসলার বর্তমান সংকটের একটি প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এত কিছু সত্ত্বেও এটা ঠিক, ইলন মাস্ক এখনো বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং টেসলা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্র্যান্ড। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেসলা দ্রুত বাজার হারাচ্ছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

মিয়ানমারে স্কুলে জান্তা হামলা, শিশুসহ নিহত হয়েছে ২২ জন

সামরিক জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় মিয়ানমারের একটি স্কুলে ২০ জন শিশু ও দুই শিক্ষকসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন।  বিদ্রোহীদের সঙ্গে ভূমিকম্পের কারণে...

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা, দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত সীমায় গাজা

ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা । জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি অবরোধে বিপর্যস্ত গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বর্তমানে অনাহারের...

Related Articles

পিএসএলে খেলবেন সাকিব!

দীর্ঘ বিরতির পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তান সুপার লিগের...

মিশা সওদাগরকে মারধরের দাবি , ভিডিও ভাইরাল- আসল ঘটনা কী?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুধবার রাতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন মানুষ...

বন্যা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ২৭০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বাংলাদেশকে। 

বাংলাদেশকে, ২০২৪ সালের আগস্টে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, কৃষি ও জীবিকায় পুনরুদ্ধার এবং...

‘পাকিস্তানের থেকে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে নেওয়া উচিত’

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে পরমাণু অস্ত্র...