আন্তর্জাতিক মহলের চোখ এখন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে জর্জরিত ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতের মুখোমুখি। শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল একযোগে ইরানের শতাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের শীর্ষ তিন সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে তেলআবিব। এর জবাবে ইরানও প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—সামরিক শক্তি, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও আক্রমণ সক্ষমতায় কার অবস্থান বেশি শক্তিশালী?
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সামরিক গবেষণা সংস্থা আইআইএসএস-এর তথ্যানুযায়ী, ইরানের সক্রিয় সৈন্যসংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার, যেখানে ইসরায়েলের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০। তবে রিজার্ভ ফোর্সে ইসরায়েল অনেকটা এগিয়ে—৪ লাখ ৬৫ হাজার সদস্য নিয়ে। উভয় দেশেরই নাগরিকদের জন্য সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক হলেও ইরানে এটি অধিক কঠোরভাবে প্রযোজ্য।
সামরিক ব্যয়ের দিক থেকেও পার্থক্য স্পষ্ট। স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২৩ সালে ইরান খরচ করেছে ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ইসরায়েল ব্যয় করেছে ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার—যার বড় অংশ গাজা যুদ্ধের পরবর্তী প্রস্তুতিতে ব্যয় হয়েছে।
স্থলবাহিনীতে ইরান সংখ্যায় অনেক বেশি—যুদ্ধ ট্যাংক, আর্টিলারি ও সাঁজোয়া যান মিলিয়ে তারা অনেক এগিয়ে। তবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সেনা প্রশিক্ষণের দিক থেকে ইসরায়েল বরাবরই আধুনিক। ইসরায়েলের বিমানবাহিনীতে ৩৪৫টি যুদ্ধবিমান রয়েছে, যেখানে ইরানের আছে ৩১২টি।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’, যা গত এপ্রিলেও ইরানি হামলা প্রতিহত করে। এ ছাড়া তাদের আছে ‘ডেভিড’স স্লিং’ ও ‘অ্যারো সিস্টেম’, যা ৩০০ থেকে ২৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম। অপরদিকে ইরান গত ফেব্রুয়ারিতে মোতায়েন করেছে ‘আজারাখশ’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করতে সক্ষম।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে ইরানের আছে অন্তত ১২ ধরনের মিসাইল, যার মধ্যে খোররামশহর ও সেজ্জিল ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ইসরায়েলের রয়েছে জেরিকো-৩, যার সর্বোচ্চ পাল্লা অনুমানিক ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার।
সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইস্যু—পারমাণবিক অস্ত্র। ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ৯০টি পারমাণবিক বোমা আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করেনি, তবে তাদের পরমাণু কর্মসূচি উন্নত। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি একসময় পারমাণবিক অস্ত্রকে হারাম ঘোষণা করলেও, সম্প্রতি তারা নীতিমালা বদলের ইঙ্গিত দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তিগত আধুনিকতায় ইসরায়েল এগিয়ে থাকলেও, জনশক্তি ও যুদ্ধ সরঞ্জামের সংখ্যায় ইরান অনেক শক্তিশালী। ফলে এই সংঘাত সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিলে তা শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না—পুরো মধ্যপ্রাচ্যকেই গ্রাস করতে পারে। সাম্প্রতিক হামলা, পাল্টা হুমকি ও পরস্পরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্রবৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সেই বাস্তবতাই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
Leave a comment