তেহরান ও তেল আবিব, ১৩ জুন ২০২৫ — মধ্যপ্রাচ্যে বহুল আলোচিত উত্তেজনা অবশেষে ভয়াবহ বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। ইরানে ইসরায়েলের অতর্কিত বিমান হামলার পর এবার পাল্টা জবাব দিয়েছে তেহরান। শুক্রবার দিনগত রাত একটার পর ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার পরপরই তেল আবিব ও জেরুজালেমের আকাশে সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে নগরদ্বয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, তেল আবিবের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী স্পষ্ট দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তারা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা হয়েছে এবং তা লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য কার্যক্রম চলছে। তারা জানিয়েছে, আয়রন ডোমসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় আছে।
ইরানের এই পাল্টা হামলা এসেছে ইসরায়েলি বাহিনীর একযোগে পরিচালিত ভয়াবহ বিমান হামলার জবাবে। এর আগে ভোররাতে ইসরায়েল ৮টি ইরানি শহরের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর শতাধিক বিমান হামলা চালায়। এতে অন্তত তিনজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তেহরান এই হামলাকে ‘আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়ে কঠিন প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানি হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। দেশটির জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানায়, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
এই পরিস্থিতিকে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক বিপজ্জনক পর্বের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। দুই দেশের পরমাণু সক্ষমতা, ড্রোন প্রযুক্তি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ বিবেচনায় নিয়ে কেউ কেউ এই সংঘাতকে ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের প্রাক-মুহূর্ত’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত উভয় দেশই নিজেদের অবস্থানে অনড়। এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তই হতে পারে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া অধ্যায়।
Leave a comment