Home আন্তর্জাতিক ইরানের তিন কৌশলেই সাফল্য
আন্তর্জাতিক

ইরানের তিন কৌশলেই সাফল্য

Share
Share

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সম্প্রতি দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যে সামরিক হামলা চালিয়েছেন, তা ‘ট্রাম্প ডকট্রিন’-এর একটি সফল প্রয়োগ। তাঁর মতে, এই নীতির ভিত্তি হলো—প্রথমে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা, ব্যর্থ হলে শক্তি প্রয়োগ এবং দ্রুত এলাকা ত্যাগ। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন বহু কল্পনাপ্রসূত নীতির প্রয়োগ দেখা গেছে, যার ফলাফল হয়েছে দীর্ঘ যুদ্ধ, বিশাল ব্যয় এবং মানবিক বিপর্যয়। ভ্যান্স নিজেও অতীতে এমন সামরিক হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচক ছিলেন।

ইরানে চালানো সামরিক হামলায় ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, তবে সেগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে কি না, বা ইরান চিরতরে কর্মসূচি থামিয়ে দিয়েছে কি না, তার কোনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। বরং পরিস্থিতি বলছে, ইরান হয়তো কিছু সময়ের জন্য থেমে আছে, তবে ভবিষ্যতে আবার এগিয়ে যাবে—যেমনটা করেছে উত্তর কোরিয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভ্যান্সের বক্তব্য এমন একটি বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে, যে ভয় দেখিয়েই সব কিছু অর্জন সম্ভব। তবে ইতিহাস বলে, শক্তি প্রদর্শনের এই ধারণা বহুবার ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন, ১৯৯৯ সালে সার্বিয়ার মিলোসেভিচ কিংবা বর্তমানে চীন—তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকি উপেক্ষা করেই তাদের উদ্দেশ্যে অটল থেকেছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত হামলার মুখে পড়ে সাময়িকভাবে পিছু হটলেও পরে আবার আগের পথেই ফিরেছে।

ইরানও এর ব্যতিক্রম নয়। তারা যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে নতি স্বীকার করবে—তা ভাবা একধরনের কূটনৈতিক সরলতা। বরং ইরান তার তিনটি প্রধান কৌশল প্রয়োগ করে চলেছে—প্রথমত, শক্তি ও চাপ সহ্য করার সামর্থ্য; দ্বিতীয়ত, কখনো কখনো সাময়িকভাবে নমনীয়তা দেখিয়ে সময় কেনা; এবং তৃতীয়ত, কৌশলে প্রতিপক্ষকে পিছিয়ে দিতে ধৈর্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ইরান বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কৌশলগুলোই ইরানকে বারবার টিকিয়ে রেখেছে।

এই প্রসঙ্গে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশ্লেষক মেলানি ডব্লিউ সিসন মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে কোনো বৈপ্লবিক ‘ডকট্রিন’ বলা যায় না। বরং এটি পুরোনো এক ভুল ধারণার পুনরাবৃত্তি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভয় দেখিয়েই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সিসন বলেন, এই হামলা কিছুটা সময়ের জন্য ইরানকে থামিয়ে দিতে পারে, কিন্তু চিরতরে নয়।

তিনি মনে করিয়ে দেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি একবার বলেছিলেন, “আমেরিকা একটা কুকুরের মতো, তুমি যদি পিছিয়ে যাও, ও আক্রমণ করবে; আর তুমি যদি সামনে এগিয়ে যাও, তাহলে ও পিছিয়ে যাবে।” এই দৃষ্টিভঙ্গিই ইরানের কৌশলের ভিত্তি হয়ে আছে।

এমন বাস্তবতায় ভ্যান্স বা ট্রাম্পের ‘শক্তি প্রদর্শন’-নির্ভর কৌশল যদি সত্যিই সফল হতো, তাহলে ইতিহাসে এত ব্যর্থতা দেখা যেত না। বরং মনে হচ্ছে, এই তথাকথিত ‘ট্রাম্প ডকট্রিন’-এর চেয়ে ইরানের তিন কৌশলই বেশি কার্যকর এবং বাস্তববাদী।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

আমরা আবারও যাবো গোপালগঞ্জে : নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আবারও গোপালগঞ্জ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব। জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেকটা উপজেলায় প্রত্যেকটা...

মুন্সীগঞ্জে সাপের কামড়ে নারীর মৃত্যু

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে সেলিনা বেগম (৫৬) নামের এক নারীর। শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের বিবন্ধী গ্রামে বুধবার (১৬ জুলাই) দিবাগত...

Related Articles

চিনি দুর্নীতিতে সাবেক মন্ত্রীর সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড

ইন্দোনেশিয়ার সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী থমাস ত্রিকাসিহ লেমবংকে চিনি আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগে দেশটির একটি...

শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে পদোন্নতি পেলেন মেক্সিকান নারী পুলিশ

হারিকেন ওটিসের তাণ্ডবে মেক্সিকোর আকাপুলকো শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পর যখন মানুষ...

কোন অজুহাতে সিরিয়ায় ইসরায়েলের বোমা হামলা?

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদায় বিস্তৃত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত বুধবার...

বৃষ্টির ঢলে পাকিস্তানে প্রাণ গেল ১৮০ জনের

পাকিস্তানে মৌসুমি বৃষ্টির দাপট বাড়তেই চলছে। গত জুনের শেষ দিক থেকে শুরু...