তেল আবিব, ১৪ জুন ২০২৫ — মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায়। ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র যখন ইসরায়েলের ভূখণ্ডে আঘাত হানছে, ঠিক সেই সময়েই দেশটির তেল আবিব শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের পাশেই আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৩ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আল জাজিরা ও রয়টার্স জানায়, শুক্রবার রাতভর ইরান থেকে ইসরায়েল অভিমুখে ছোড়া রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে দেশটির বিভিন্ন স্থানে। হাওম নামের একটি ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের অন্তত সাতটি জায়গায় রকেট আছড়ে পড়েছে। এইসব হামলার কারণে জনগণের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তেল আবিব ও জেরুজালেমের আকাশে একের পর এক বিস্ফোরণ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী লক্ষ্য করা গেছে।
এর আগে শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক বড়সড় সামরিক অভিযানে ২০০টিরও বেশি জঙ্গিবিমান ব্যবহার করে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। এতে ইরানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কমান্ডারসহ অন্তত ২০ জন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বিমান শাখার প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ। সমগ্র হামলায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ৭৮ এবং আহত প্রায় তিন শতাধিক।
এ হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করছে এবং সেগুলো ভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তেল আবিব শহরে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং আকাশে আগুন ও ধোঁয়ার দৃশ্য ফুটে উঠেছে। মধ্যরাত নাগাদ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশেই বড় ধরনের আগুন জ্বলতে দেখা গেছে, যদিও তা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের ফলে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে এবং জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল এই সংঘাতকে ‘সহিংস বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্ত’ বলে বর্ণনা করে উভয়পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানালেও এখনো যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
Leave a comment