পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং আরও অন্তত ২৭ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শিনিলে শহরের কাছে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, জীর্ণশীর্ণ ট্রেন, অতিরিক্ত যাত্রী ও ভারী পণ্য বোঝাই ছিল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায়, চলন্ত ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে আগে থেকেই থেমে থাকা আরেকটি ট্রেনের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। সংঘর্ষের পরপরই কয়েকটি বগি উল্টে যায় এবং কিছু বগি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে পড়ে। স্থানীয় টেলিভিশন ডায়র টিভি’র প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থল লোহা-পাথরের স্তূপে পরিণত হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় আতঙ্কে অনেক যাত্রী জানালা ভেঙে লাফিয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন,“ধাক্কার শব্দ এতটাই জোরে ছিল যে আশপাশের মানুষ ভেবেছিল ভূমিকম্প হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ট্রেনের বগি উল্টে যায়, ভেতরের মানুষ চিৎকার করতে থাকে।”
অনেক যাত্রী ট্রেনের জানালা ও দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় নিকটবর্তী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
শিনিলে জেলার প্রশাসক জিবরিল ওমর বলেন, দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল ট্রেনের পুরোনো অবস্থা ও অতিরিক্ত বোঝাই।
তিনি বলেন, “ট্রেনটি অত্যন্ত পুরোনো ছিল এবং ভারী বোঝা টানার ক্ষমতা ছিল না। চাল, পাস্তা, ভোজ্যতেলসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য ও যাত্রী বহন করছিল। অতিরিক্ত ওজনের কারণেই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে সংঘর্ষ ঘটে। তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ যাত্রী। তারা রাজধানী দেভেলে শহর থেকে দিরে দাওয়া যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। সোমালি আঞ্চলিক সরকারের মুখপাত্র মোহাম্মদ আদম নিশ্চিত করেছেন, নিহত ও আহতদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজে যোগ দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা, পুলিশ ও রেলকর্মীরা। আহতদের বহন করতে ব্যবহৃত হয় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরবাইক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উদ্ধার অভিযান চলে গভীর রাত পর্যন্ত। দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ শিনিলে জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. হাবতামু কেলিল বলেন,“ইথিওপিয়ার অনেক রেললাইন এখনও ঔপনিবেশিক আমলের। পুরোনো ইঞ্জিন ও বগিগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এমন দুর্ঘটনা আরও বাড়তে পারে।”
দুর্ঘটনার পর ইথিওপিয়া সরকার রেলনিরাপত্তা জোরদারে নতুন কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,“এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে রেল যোগাযোগে নিরাপত্তা বাড়াতে অবকাঠামোগত সংস্কার ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।”
ইথিওপিয়ার শিনিলে শহরের এই দুর্ঘটনা দেশটির রেলব্যবস্থার নাজুক বাস্তবতাকে নতুন করে সামনে এনেছে। সরকারের তদন্ত শুরু হলেও নিহতদের পরিবার ও দেশবাসী এখন অপেক্ষা করছে—কখন নিরাপদ হবে ইথিওপিয়ার রেলপথ।
Leave a comment