১৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি ইতিহাসের পাতায় বিশেষভাবে স্মরণীয়, কারণ এই দিনে বিশ্বজুড়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এই দিনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। ১১২৩ সালে সম্রাট ফ্রেডরিক জেরুজালেম দখল করেন, যা মধ্যযুগীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রয়েছে। ১৫৩৬ সালে ফ্রান্স ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ইউরোপ ও মুসলিম বিশ্বে বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ১৭৮৭ সালে অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথমবারের মতো শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে, যা শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিজ্ঞান ও সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮৮৫ সালে মার্ক টোয়েনের বিখ্যাত উপন্যাস অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন প্রকাশিত হয়, যা বিশ্বসাহিত্যে অন্যতম সেরা গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৩০ সালে প্লুটো গ্রহ আবিষ্কৃত হয়, যা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল।
বিশ্ব রাজনীতিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ নানা ঘটনার সাক্ষী। ১৯৬৫ সালে গাম্বিয়া ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব সময়ের এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে, যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আফগানিস্তান। একই দিনে ১৯৭৬ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়, যা বাঙালি জাতির জন্য এক আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল।
এই দিনে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা (১৭৪৫), যিনি বিদ্যুতের ভোল্টেজ আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। এ ছাড়াও, ১৮৩৬ সালে জন্ম নেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, যিনি ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় ধর্মগুরু এবং দার্শনিক। ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, যিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় অসামান্য অবদান রেখেছেন।
মৃত্যুর দিক থেকেও ১৮ ফেব্রুয়ারি বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির বিদায়ের দিন। ১৫৬৪ সালে প্রয়াত হন ইতালীয় ভাস্কর ও শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো, যিনি সিস্টিন চ্যাপেলের বিখ্যাত চিত্রকর্মের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৬৯ সালে আমরা হারাই অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে, যিনি শিক্ষাঙ্গনে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে আছেন।
১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ইতিহাসের প্রতিটি দিনই কোনো না কোনোভাবে মানব সভ্যতার গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
Leave a comment