আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শুক্রবার বিকেল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মিছিল নিয়ে মোড়ে অবস্থান নেন তাঁরা। রাত ৯টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁদের দাবি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত তাঁরা এই অবরোধ প্রত্যাহার করবেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা দলে দলে ভাগ হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁদের হাতে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন পোস্টার, যেখানে লেখা রয়েছে ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘এই মুহূর্তে ব্যান চাই, আওয়ামী লীগের ব্যান চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী ছাত্রশিবির, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলনসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। সেখানে হেফাজতে ইসলামের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম রাত ৯টায় শাহবাগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। শাহবাগেই আওয়ামী লীগের কবর খুঁড়ব।’ একইসঙ্গে তিনি সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইন্টেরিম সরকার যদি দেরি করে, তাহলে শুধু শাহবাগ নয়, সারা বাংলায় ব্লকেড দেওয়া হবে।’ এ সময় তিনি জুলাই মাসে ঘোষিত গণ–অভ্যুত্থানের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ মাহমুদুর রহমান খান সোহেলের স্ত্রী মরিয়ম খানম বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা আমাদের প্রাণের দাবি। ৫ আগস্টের পর এত দিন পার হয়ে গেছে, এখনও কেন প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি?’
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে নয়, সাধারণ নাগরিক হিসেবে এখানে এসেছি।’ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি আজিজুল হক ইসলামাবাদীও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের আহ্বান জানান।
ব্লকেড কর্মসূচির সূচনা হয় রাজধানীর যমুনা এলাকার ফোয়ারার পাশে একটি অস্থায়ী মঞ্চ থেকে। জুমার নামাজের পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অভিমুখে পদযাত্রার ডাক দেন। এরপর হাজারো মানুষ শাহবাগে এসে অবস্থান নেয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, বিরোধী দল দমন করেছে এবং জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। সেই কারণে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিত।
শুক্রবার রাত পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, ফলে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১০:৪০) পর্যন্ত সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Leave a comment