ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না নিতে পারার জন্য সরকারের দুই উপদেষ্টাকে দায়ী করে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনরত দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ইশরাক। তিনি বলেন, তাঁর প্রতি আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন না হওয়াই এই আন্দোলনের মূল কারণ, তবে এটি শুধু ব্যক্তিগত কোনো পদ-পদবির দাবি নয়, বরং জাতীয় নির্বাচন ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
ইশরাক বলেন, “আদালতের রায় অনুযায়ী আমাকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের অভ্যন্তরে কিছু প্রভাবশালী উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন।” তাঁর অভিযোগ, এই হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে এবং একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
তিনি দাবি করেন, “এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। আমি তাঁদের শুভকামনা করি। তাঁরা যদি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চান, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে চান, সেটি তাঁদের অধিকার। তবে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে থেকে প্রভাব খাটানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইশরাক বলেন, “এই সরকার গঠনের সময় জনগণের একটি প্রত্যাশা ছিল—আগের একদলীয় দুঃশাসনের বিপরীতে এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রশাসন হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই প্রত্যাশা ধূলিসাৎ হতে বসেছে।”
চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই লড়াই চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকার আদালতের রায় অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। রাষ্ট্রের আইন মান্য করা হলে, আমাকেই মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে।”
বিক্ষোভে তাঁর সমর্থকেরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, গত ১৪ মে থেকে তাঁরা নগরভবনের সামনেও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ফলাফল বাতিল চেয়ে মামলা করেছিলেন ইশরাক। ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের বিজয় বাতিল করা হয় এবং ইশরাককে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করলেও শপথ অনুষ্ঠান আটকে রয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায়।
ইশরাক হোসেন জানিয়েছেন, বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের পথেই থাকবেন।
Leave a comment