ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের আলিগড় শহরে অবস্থিত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (এএমইউ) উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও প্রভাবশালী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলিম সমাজকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় এখনও প্রগতিশীলতা, জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে সুপরিচিত।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা ঘটে ১৮৭৫ সালে, যখন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিম অ্যাঙ্গলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ (এমএও কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯২০ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় এবং বর্তমানে এটি ভারত সরকারের অধীনে পরিচালিত একটি স্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল নীতিবাক্য এসেছে পবিত্র কুরআনের সূরা আলাক থেকে: “মানুষ যা জানতো না তা মানুষকে শিখিয়েছেন।” এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এএমইউ প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে শিক্ষা, গবেষণা ও সামাজিক জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এবং প্রায় ২,০০০ শিক্ষায়তনিক কর্মী রয়েছেন।
এএমইউর ১১৫৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই নগর-ক্যাম্পাসে রয়েছে ১২টি অনুষদ এবং ৭৪টি বিভাগ, যেগুলোর মধ্যে কৃষি বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য, আইন, প্রকৌশল, মেডিসিন, ধর্মতত্ত্ব ও ইউনানী চিকিৎসা অন্যতম। এছাড়া রয়েছে বিস্তৃত আবাসিক সুবিধা, যেখানে ছাত্রদের জন্য রয়েছে স্যার সৈয়দ হল, মোহাম্মদ হাবিব হল, ভিকারুল মুলক হলসহ বেশ কয়েকটি হল এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বেগম সুলতান জাহান হল, ইন্দিরা গান্ধী হল প্রভৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের তালিকাও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রাক্তন স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাপ্রধান মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, সাংবাদিক সৈয়দ মুজতবা আলী, অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানসহ অসংখ্য কৃতীজন এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম পুরোধা রফি আহমেদ কিদোয়াই এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী হাজী মোহাম্মদ দানেশও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এএমইউ আজও উপমহাদেশের মুসলিম সমাজের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণার উৎস। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাইমা খাতুন ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে দায়িত্বে রয়েছেন এবং তিনি নারী নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির এই প্রাচীন পীঠস্থানটি কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের প্রতীক, যার ঐতিহ্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রেরণা যুগিয়েছে এবং যুগিয়েই চলেছে।
Leave a comment