১৯৭৫ সালের ৬ই মার্চ একটি ঐতিহাসিক দিন ছিল, যেদিন ইরান এবং ইরাক দুটি দেশ তাদের দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ নিরসনের জন্য ঐতিহাসিক আলজিয়ার্স চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে শুধু তাদের মধ্যকার সীমান্ত সমস্যাই সমাধান হয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হয়।
ইরান ও ইরাকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের অধিকার নিয়ে বিরোধ চলছিল, বিশেষ করে শাত-আল-আরব নদী নিয়ে। এ নদী দুটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের প্রধান নৌপথ এবং বাণিজ্যিক কৌশলগত ভূখণ্ড। তবে এই বিরোধে একে অপরকে শত্রু হিসেবে দেখার পরিবর্তে, আলজিয়ার্স চুক্তি তার নিজের পরিচয়ে শান্তির বার্তা পৌঁছিয়েছিল।
এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেন আলজিয়ার্স শহরের সরকার, যেখানে একটি নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল যাতে দুই দেশের শীর্ষ নেতারা সমঝোতার মাধ্যমে এই বিরোধের অবসান ঘটাতে পারেন। চুক্তি অনুযায়ী, ইরাক শাত-আল-আরব নদী থেকে কিছু অংশ পেতে সক্ষম হয় এবং ইরানও তার কিছু ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এতে দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি মাইলফলক স্থাপন হয়।
বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে এই চুক্তি আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি দেখিয়েছিল যে, যুদ্ধ এবং সংঘাতের পরিবর্তে সংলাপ, আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো বিরোধের সমাধান সম্ভব। তবে, আলজিয়ার্স চুক্তির পরেও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ জটিল থাকলেও, চুক্তির মাধ্যমে অন্তত দু’টি দেশ তাদের সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করেছিল।
এটি কেবলমাত্র ইরান ও ইরাকের জন্যই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হয়। এটি বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সমাজকে একটি বার্তা দেয়—যুদ্ধ কখনো সমাধান হতে পারে না, শান্তি এবং সংলাপের মাধ্যমে আগামীর পথ খোঁজা জরুরি।
তবে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আরও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার, এবং আলজিয়ার্স চুক্তি সেই পথ দেখানোর এক সফল দৃষ্টান্ত।
Leave a comment