আফগানিস্তানে আবারও ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সোমবার (স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে) ৬ দশমিক ৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পে অন্তত ২৭ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। দেশটির উত্তরাঞ্চলের বালখ, সামাঙ্গান, সার-ই-পুল, বাগলান ও কুন্দুজ প্রদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
সরকারি সংবাদ সংস্থা বাখতার নিউজ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৭৩০ ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে সামাঙ্গান ও বালখ প্রদেশে, যেখানে অনেক গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভূমিকম্পের প্রভাবে বহু ঘরবাড়ি, স্কুল ও মসজিদ ভেঙে পড়েছে। বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফ শহরেও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনা রওজা মোবারক (হযরত আলীর মাজার) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, বাগলান ও বাদাখশান প্রদেশেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। বাদাখশানের শহর-ই-বোজর্গ জেলার চোগানি গ্রামে প্রায় ৮০০টি ঘরবাড়ি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
আফগান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (ARCS) জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ চলছে এবং নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী দল। বহু গ্রামে এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংস্থাটির মুখপাত্র বলেন, “ভূমিকম্পে ব্যাপক মানবিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা আহতদের চিকিৎসা ও আশ্রয় সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।” ভূমিকম্পের পর স্থানীয় প্রশাসন সব হাসপাতালকে জরুরি প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছাকাছি, মাটির প্রায় ২৮ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটারশক বা অনুবর্তী কম্পন অনুভূত হয়, যা আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়।
আফগানিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্গতদের জন্য ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে গৃহহীনদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আফগানিস্তান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চল জুড়ে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় প্রায়ই মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এর আগে, গত অক্টোবর মাসেই পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে একাধিক ভূমিকম্পে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন, যা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি ছিল।
নতুন এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে । স্থানীয়দের মতে, শীতের শুরুতে আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে।এই মর্মান্তিক দুর্যোগে গোটা দেশ শোকাহত, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুত মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
                                                                        
                                                                        
                            
                            
                                
			            
			            
 
			        
 
			        
 
			        
 
			        
				            
				            
				            
Leave a comment