দক্ষিণ চীন সাগরের আকাশে আধাঘণ্টার ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ও একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। উভয় দুর্ঘটনায় সব ক্রু সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর।
নৌবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাগুলো ঘটেছে এমন এক কৌশলগত জলসীমায়, যা বিশ্ব রাজনীতিতে সম্ভাব্য সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত।
প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে, যখন একটি MH-60R Seahawk হেলিকপ্টার “USS Nimitz” বিমানবাহী রণতরী থেকে রুটিন ফ্লাইট পরিচালনার সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাগরে পড়ে যায়। তিনজন ক্রু সদস্যকেই দ্রুত উদ্ধার করা হয়।
এর প্রায় ৩০ মিনিট পর, একই রণতরী থেকে উড্ডয়ন করা একটি F/A-18F Super Hornet ফাইটার জেটও বিধ্বস্ত হয়। দুই পাইলট সময়মতো প্যারাশুট দিয়ে বেরিয়ে এসে নিরাপদে উদ্ধার হন।নৌবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগুলো কোনো বৈরী হামলা বা বাহ্যিক হস্তক্ষেপের কারণে ঘটেনি। উভয় ঘটনার পেছনে প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা জ্বালানিসংক্রান্ত সমস্যা থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এই দুই দুর্ঘটনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “এটি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা।” তিনি সম্ভাব্য জ্বালানির মানসংক্রান্ত সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। মালয়েশিয়া থেকে জাপানগামী বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “এটা খারাপ জ্বালানির কারণে হতে পারে। আমরা খুঁজে বের করব। কিছু গোপন করার নেই।”
দক্ষিণ চীন সাগরকে বিশ্বের অন্যতম কৌশলগত জলসীমা হিসেবে ধরা হয়- যেখানে চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইসহ কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। তবে চীন প্রায় পুরো সাগরটির মালিকানা দাবি করে, যা আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে অমান্য করে। গত দুই দশকে বেইজিং এ অঞ্চলের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জ ও প্রবালপ্রাচীরে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, চীনের এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সমুদ্রপথে অবাধ চলাচলের স্বাধীনতার জন্য সরাসরি হুমকি।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ও অংশীদারদের সহায়তায় ওই অঞ্চলে নিয়মিত নৌ ও আকাশ অভিযান পরিচালনা করে থাকে, যাতে চীনের আঞ্চলিক প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। দুই দেশের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। পারস্পরিক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিযোগিতামূলক সামরিক কার্যক্রম উত্তেজনা বাড়িয়েছে। তবে রবিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি কাঠামোগত বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে। এতে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ট্রাম্পের চলমান এশিয়া সফরের সময়, যেখানে তার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
Leave a comment