ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দারা আসন্ন আদমশুমারিতে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা লিখলে তাঁদের ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আদমশুমারির মাধ্যমে রাজ্যে কতজন বিদেশি রয়েছে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে যদি কেউ নিজেকে বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিশ্বশর্মার বক্তব্য অনুযায়ী, বাঙালি পরিচয় দেওয়া মানেই বাংলাদেশের নাগরিক বলে ধরে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আদমশুমারিতে বাঙালি বা বাংলা ভাষা উল্লেখ করা হলে তা থেকে বোঝা যাবে রাজ্যে বিদেশিদের সংখ্যা কত।” তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে আসামে নতুন করে ভাষাভিত্তিক বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
এ মন্তব্যের সূত্রপাত হয়েছে বোড়োল্যান্ড আঞ্চলিক পরিষদের সংখ্যালঘু ছাত্র সংসদের নেতা মইনুদ্দিন আলীর বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, “আমরা বাঙালি বংশোদ্ভূত মুসলিম। আমরা এই আদমশুমারিতে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা লিখব, অসমিয়া নয়।” এরপরই মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা মন্তব্য করে জানান, “আদমশুমারিতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া অপরাধ।”
ভারতে সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো নাগরিক তাঁর পছন্দমতো মাতৃভাষা নির্বাচন করতে পারেন। কিন্তু আসামে রাজনৈতিকভাবে ভাষা প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে স্পর্শকাতর বিষয়। ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, এবং এই নির্বাচনকে ঘিরে ভাষাভিত্তিক রাজনীতি আবারও তীব্র হয়ে উঠছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
বিশ্বশর্মার বক্তব্যের পর আসামের দুটি প্রধান সংগঠন—আসাম সাহিত্য সভা এবং অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন—মইনুদ্দিন আলীর মন্তব্যকে ‘ভাষাভিত্তিক ব্ল্যাকমেল’ বলে আখ্যা দিয়েছে। আলীকে ইতিমধ্যেই তাঁর সংগঠন থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়েছে।
আসামে বিদেশি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়ায় এর আগেও বহু বাঙালিকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত জুনে হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, রাজ্যের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ৩৩০ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। যদিও তাঁদের অনেকেই ভারতের নাগরিক বলে দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সমালোচনা করে বলেন, “বাঙালিদের এভাবে অপমান করা বন্ধ করতে হবে।” আজ শুক্রবার কলকাতায় মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
ভারতে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। ২০২১ সালে পরবর্তী আদমশুমারি হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। এখন ২০২৭ সালের মধ্যে তা শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আদমশুমারির সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি।
আসামের পর্যবেক্ষকদের মতে, হিমন্ত বিশ্বশর্মার সাম্প্রতিক মন্তব্য রাজ্যের ভোটের রাজনীতিতে বিজেপির অবস্থানকে আরও মজবুত করতে পারে, বিশেষ করে অসমিয়া ভাষাভাষী জনগণের কাছে।
Leave a comment