Home স্মরণে আজ বাংলা কৌতুকের নক্ষত্র টেলি সামাদের প্রয়াণ দিবস
স্মরণে

আজ বাংলা কৌতুকের নক্ষত্র টেলি সামাদের প্রয়াণ দিবস

Share
Share

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ৬ মে ২০১৯ দিনটি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে একটি বিশেষ কারণে—এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান বাংলা রূপালী পর্দার অন্যতম শক্তিমান ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র জগত হারায় এক অনন্য প্রতিভাকে, যিনি ছিলেন দর্শকদের প্রাণের মানুষ, হাসির অমোঘ উৎস।

১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জে জন্ম নেওয়া টেলি সামাদের প্রকৃত নাম ছিল আবদুস সামাদ। চারুকলা ইনস্টিটিউটে (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই সময়েই নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ জন্ম নেয়। তাঁর চলচ্চিত্রে পথচলা শুরু ১৯৭৩ সালে, সুজন সখী ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতেই তাঁর অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে, আর এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

টেলি সামাদ শুধু কৌতুক অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন একজন দক্ষ অভিনেতা, যিনি হিউমারের মধ্যেও বাস্তব জীবনের সংকট ও মানসিকতার ছায়া ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। প্রায় ৬০০-এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি, যার বেশিরভাগই ছিল দর্শকদের মনোরঞ্জনের অনন্য উপকরণ। তাঁর কণ্ঠে গানও ছিল সমান জনপ্রিয়, যেমন ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানটি যা আজও লোকমুখে ফেরে।

টেলি সামাদের অভিনীত চরিত্রগুলো ছিল বৈচিত্র্যময়—কখনো বোকা সাজার আড়ালে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির চরিত্র, কখনো সমাজের বাস্তবতাকে ব্যঙ্গ করে নির্মিত কমিক রোল, আবার কখনো পার্শ্বচরিত্রে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল হোলমার্ক হাসি, যা পরিবার নিয়ে বসে উপভোগ করা যেত। সেই সময়ের ‘ক্লাসিক কমেডি’ উপস্থাপনার যে ঘরানা, তা গড়ে তোলার পেছনে টেলি সামাদের অবদান অনস্বীকার্য।

মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২০১৯ সালের ৬ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শুধু চলচ্চিত্র অঙ্গন নয়, সর্বসাধারণও গভীর শোক প্রকাশ করেন। বিভিন্ন মহল থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয় এই কিংবদন্তি শিল্পীর প্রতি।

টেলি সামাদকে আজও স্মরণ করা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের হাসির রাজপুত্র হিসেবে। তাঁর অনুপস্থিতি যেন এক শূন্যতা তৈরি করেছে, যা পূরণ হওয়ার নয়। হাস্যরসের মধ্য দিয়ে যিনি সমাজ ও সময়কে স্পর্শ করতে পেরেছিলেন, তিনি আজও বেঁচে আছেন দর্শকের হৃদয়ে।

চলচ্চিত্রের রূপালি পর্দা আজও তাঁর প্রতীক্ষায় ঝলমল করে—শুধু একবার হাসিয়ে যাওয়ার জন্য।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

সৌদিতে মাথায় কাঁচ পড়ে প্রাণ গেল চট্টগ্রামের যুবকের

সৌদি আরবে কাজ করার সময় মাথায় কাঁচ পড়ে মোহাম্মদ ওমর ফারুক (২৬) নামে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৫ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল...

আফ্রিদির ‘ভয়ংকর’ চরিত্রের উন্মোচন: ঘনিষ্ঠ বন্ধু তানভীর রাহীর বিস্ফোরক বর্ণনা

বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তারকে ঘিরে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। এবার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী তানভীর...

Related Articles

বাংলা সাহিত্যের হীরকখণ্ড ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ

বাংলা সাহিত্যের এক প্রগাঢ় আলোকবর্তিকা, হুমায়ূন আহমেদ, আজও বহমান এক নদীর মতো...

আজ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শহীদ মীর মুগ্ধর প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক স্মরণীয় নাম শহীদ মীর...

আজ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ৩০ মে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। এদিনটিকে কেন্দ্র করে...

আজ জাতীয় কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। 

আজ   ১১ জ্যৈষ্ঠ সাম্য, প্রেম ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল  ইসলামের ১২৬তম...