দীর্ঘ শত্রুতার ইতিহাস পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে মুখোমুখি বসেছিলেন সিরিয়া ও ইসরায়েলের উচ্চপর্যায়ের দুই কর্মকর্তা। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সফরের ফাঁকে শনিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছে দামেস্কের কূটনৈতিক সূত্র।
সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যকার কয়েক দশকের বৈরিতার পর এই বৈঠককে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। সূত্র জানায়, বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দক্ষিণ সিরিয়ায় নতুন করে ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন এবং তা নিয়ে শারার প্রশাসনের উদ্বেগ।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার সাবেক শাসক বাশার আল-আসাদকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইসলামপন্থী নেতা আহমেদ আল-শারা। তাঁর উত্থানের পরপরই সিরিয়ার ভেতরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, যার লক্ষ্য ছিল শারার প্রশাসনের সামরিক স্থাপনা। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
বৈঠকে সিরিয়ার পক্ষ থেকে সরাসরি অংশ নেননি শারা, তবে কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা ইসরায়েলি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা ঘিরে সিরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা সংঘাত চান না, বরং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায় সিরিয়া।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। ইরানের প্রতিবেশী এই দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের কৌশলগত মিত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তেলআবিব।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার গত মাসে সিরিয়ার সঙ্গে শান্তি ও সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর জবাবে তখন সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, আলোচনা শুরু করার সময় এখনো আসেনি। কিন্তু এরপর থেকেই মার্কিন ও মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে গোপন যোগাযোগের ইঙ্গিত আসতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম বারাক সম্প্রতি লেবাননে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন, সিরিয়া-ইসরায়েল সংলাপ শুরু হয়েছে। এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মে মাসে রিয়াদ সফরে শারার সঙ্গে বৈঠকে সিরিয়া-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে আজারবাইজান সফরে শারা দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। তাতে সিরিয়ায় আজারবাইজানি গ্যাস রপ্তানির সম্ভাবনা এবং তুরস্কের মাধ্যমে জ্বালানি সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়। তুরস্ক উভয় দেশেরই ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যে চলমান কূটনৈতিক সমীকরণে নতুন মোড় আনার আভাস দিচ্ছে। বিশেষ করে সিরিয়ার বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে ইসরায়েলের সমঝোতা হলে, অঞ্চলজুড়ে নতুন ধরনের সামরিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
Leave a comment