বাংলাদেশে চলতি বছর আরও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অতি গরিব শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিক শ্লথগতি ও দুর্বল শ্রমবাজারকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে দেশের অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে, যেখানে গত বছর তা ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশের অর্থনীতিতে গত কয়েক বছর ধরে যে মন্থরতা বিরাজ করছে, তা সরাসরি প্রভাব ফেলছে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর। প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার ফলে অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছেন। ফলে শুধু অতি গরিবই নয়, জাতীয় দারিদ্র্য হারও বাড়ছে। ২০২৪ সালে জাতীয় দারিদ্র্য হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২২ দশমিক ৯ শতাংশে।
২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এ হিসাবে, ২০২৫ সালের শেষে দেশে অতি গরিব মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখে দাঁড়াবে, আর জাতীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, স্থবিরতা কাটিয়ে অর্থনীতিকে সচল করতে না পারলে এবং শ্রমবাজারে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। একই সঙ্গে আয় বৈষম্যও বাড়বে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে নীতিগত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করা, কর্মসংস্থান তৈরি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় অর্থনৈতিক সংকট শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বাস্তব জীবনে আরও গভীর অসাম্য ও অসন্তোষ সৃষ্টি করবে।
Leave a comment