ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফ থেকে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করার কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে জারি করা হত্যাকাণ্ড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ – এসব বিষয় বাংলাদেশের আইনানুগ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার-বিবেচনার আওতায় আনা হবে।
ড. ইউনূস বলেন যে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন নিশ্চিত করা হবে। কোনো রাজনৈতিক দাবির কারণে ভোটার তালিকা বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটবে না। নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুইটি দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক সংস্কার সীমিত হলে: নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে, ব্যাপক সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হলে: নির্বাচনের তারিখ আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্ধারিত হবে। পাশাপাশি, তিনি জোর দিয়ে বলেন আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সম্ভাব্য অপরাধের অভিযোগ থাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), হেগ-এ মামলা করার বিষয়টি সরকার বাতিল করেনি। এটি এখনও আলোচনার টেবিলে রয়েছে।
তিনি জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শুরু হয়েছে। কমিশন দেশের রাজনৈতিক চিত্র উন্নয়নের লক্ষ্যে দিক-নির্দেশনা প্রদান করছে এবং জুলাই সনদের চূড়ান্তকরণের পরিকল্পনা চলছে।
এ আলোচনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতা আতাউল্লাহর গ্রেপ্তারকে সরকারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেন। রাখাইন রাজ্যের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির সঙ্গে আরও কার্যকর যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কর্মকর্তারা, যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধনকে আরও মজবুত করার আকাঙ্ক্ষা সরকারী নীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। তবে, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপতথ্য প্রচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দেশটির সুনাম রক্ষায় এসব অপতথ্যের মোকাবিলায় সরকারের সতর্কতা ও পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
Leave a comment